খাদ্য ভর্তুকি বাড়িয়ে ৮,১০০ কোটি টাকা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার

অনলাইন ডেক্স: খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি জোরদার এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িয়ে ৮,১০০ কোটি টাকা করতে যাচ্ছে।

গত দুই বছরে আকস্মিক বন্যায় উৎপাদন হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টানা দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে, যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কয়েক মাস ধরে দুই অঙ্কে ছিল। গত বছরের জুলাই মাসে এটি ১৪ শতাংশের বেশি হলেও গত মাসে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।

এর আগে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্য ভর্তুকি সংশোধন করে ৭,২৫০ কোটি টাকা করা হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকার খাদ্যপণ্যের মজুদ বাড়ানো, ভর্তুকিতে বিক্রি এবং ত্রাণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতে চায়। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছে, যা খাদ্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

খাদ্যশস্যের মজুদ ও সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ

চলতি অর্থবছরে ৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারি গুদামে ১০.৮২ লাখ টন চালসহ মোট ১৫.১২ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। তবে বাজারে উচ্চ মূল্য ও বন্যায় ফসলহানির কারণে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে অনাগ্রহী, ফলে সরকার এ বছর আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৩.৫৮ লাখ টন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে, চলতি অর্থবছরে আউশ ধানের উৎপাদনও কমেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আউশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯.৫৫ লাখ টন কম হয়েছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেছেন, ভর্তুকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। এটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে এবং বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকার খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আওতাধীন ওএমএস কর্মসূচির জন্য ২,০৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যা সংশোধিত বাজেটে প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা হতে পারে। এর মধ্যে টিসিবির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ১,৩০০ কোটি টাকা করা হতে পারে।

জুলাই থেকে আগস্টে টিসিবির পণ্য বিতরণ বিঘ্নিত হলেও পরবর্তী সময়ে সরকার আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ জোরদার করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশেষ ব্যবস্থায় মাঝে মাঝে সবজিও বিতরণ করা হয়, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।

খাদ্য বিতরণ বাড়লেও কমেছে কিছু ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি

কম আয়ের মানুষদের সহায়তায় সরকার ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল), টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (এফএফপি) এর মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ বাড়িয়েছে। তবে এসব উদ্যোগের পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট খাদ্য বিতরণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৭ লাখ টন কমে ১৮.১৬ লাখ টন হয়েছে।

সরকার ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ৭.৮৯ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছে, যা আগের বছরের ৭.৫৮ লাখ টন থেকে কিছুটা বেশি। একইভাবে, এফএফপির আওতায় বিতরণ ৪.৪৪ লাখ টনে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ৪.৪০ লাখ টনের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাদ্য বিতরণ কমেছে।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য (এফডব্লিউ) কর্মসূচির আওতায় বিতরণ ১.০৭ লাখ টন থেকে কমে মাত্র ৫৪৩ টন হয়েছে।ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি ৩৮% কমে ২৯,০৯৫ টন হয়েছে।ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচি ২৫% কমে ১.৮৬ লাখ টন হয়েছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের পর স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষ করে মেম্বার, কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যানদের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য বিতরণ হ্রাস পেয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি সুপারিশ করেছে তাদের মধ্যে -অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক মাধ্যমে সফল ব্যবসায়িক মডেল অনুসরণ করে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে কৃষিপণ্য পৌঁছানো।মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা করতে এবং বিস্তৃত সরবরাহ কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করবে।চাল, আলু, পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যে সাময়িক শুল্ক হ্রাস বা ছাড় দেওয়া।সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করা। সরকারি গুদামের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বলে সুপারিশ করা হয়েছে।

এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে এবং বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।