
প্রতিবেদক: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও সম্মান জানাতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই উদ্দেশ্যে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল সোমবার বাজেট বক্তৃতায় তিনি জানান, এই বরাদ্দ শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের এককালীন আর্থিক সহায়তা, মাসিক সম্মানী, চিকিৎসা, আবাসন ও কর্মসংস্থানসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরেও এই খাতে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে এককালীন ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা করে। এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী শহীদ পরিবার সংখ্যা ৮৩৪টি, আর আহত ব্যক্তির সংখ্যা ১২ হাজার ৪৩ জন।
আহত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
‘ক’ শ্রেণি (৪৯৩ জন): উভয় হাত/পা হারানো, সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারানো, মানসিক ভারসাম্য হারানো বা কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারানো ব্যক্তিরা। প্রস্তাবিত সম্মানী: প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা।
‘খ’ শ্রেণি (৯০৮ জন): একটি অঙ্গ হারানো বা আংশিক অক্ষম ব্যক্তিরা। প্রস্তাবিত সম্মানী: প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা।
‘গ’ শ্রেণি (১০,০০০+ জন): চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা। প্রস্তাবিত সম্মানী: প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা।
আগামী অর্থবছরেও চলতি অর্থবছরের মতো এককালীন চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত থাকবে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভাতা ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
গুরুতর আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, মিরপুর-১৪ ও মিরপুর-৯ নম্বরে ১৪ তলাবিশিষ্ট ২৫টি ভবনে ১,০০০ ও ১,২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক ৭৬১ কোটি টাকা। ফ্ল্যাটগুলো বিনামূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হবে। কাজ শেষ করার লক্ষ্য দুই বছরের মধ্যে।
শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করতে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত ও কর্মপ্রত্যাশী ২৮,৮০০ যুবককে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পটি মূলত আগের সরকারের সময়ে শুরু হয় এবং বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৩০০ কোটি টাকার কেনাকাটা প্রস্তাব ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠিত হয়েছে। পাশাপাশি গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের কাজ চলছে।