
প্রতিবেদক: বিলাসবহুল আবাসনের বাজার কেবল ইটপাথরের মূল্যায়নে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ধন, ক্ষমতা এবং মর্যাদার এক জটিল বহিঃপ্রকাশও। গত এক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোটি কোটি ডলার মূল্যের বাড়ি বিক্রি হয়েছে, যা শুধু স্থাপত্যশৈলীর নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার নতুন ধারা বোঝার অন্যতম সূচক। চীনা ধনকুবের, সৌদি যুবরাজ, রুশ ও মার্কিন বিনিয়োগকারী, এমনকি পপ তারকা ও খেলোয়াড়রাও রয়েছেন এই সম্পত্তির ক্রেতাদের তালিকায়।
এসব বাড়ি কেউ কিনেছেন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে, কেউ দ্বিতীয় বাসস্থান তৈরির উদ্দেশ্যে, আবার কারও লক্ষ্য কর ফাঁকির সুযোগ বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা। বিলাসবহুল বাড়িগুলো তাই আজকের দিনে কেবল আবাসন নয়, একেকটি বৈশ্বিক কৌশলের অংশ।
ডিপ ওয়াটার বে, হংকং (২০১৭) – ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার
ক্রেতা: প্যান সুটং, গোল্ডেন গ্রুপ
১৩,৮৫৪ বর্গফুটের এই বাড়িটি একসময় চীনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি প্যান সুটং কিনেছিলেন। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে বাড়িটি বন্ধক রেখে বারবার ঋণ নেন, এখন তিনি দেউলিয়াত্বের মামলায় জর্জরিত।
শাতো লুই চতুর্দশ, ফ্রান্স (২০১৫) – ৩০ কোটি ডলার
ক্রেতা: মোহাম্মদ বিন সালমান, সৌদি যুবরাজ
১৭ শতকের রাজকীয় নকশায় তৈরি ৫৭ একরের এই প্রাসাদে রয়েছে খাল, ঝরনা ও প্রযুক্তিনির্ভর বিলাসিতা। এটি বর্তমানে যুবরাজের অন্যতম আলোচিত সম্পদ।
নাইটসব্রিজ, লন্ডন (২০২০) – ২৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার
ক্রেতা: হুই কা ইয়ান, এভারগ্র্যান্ড গ্রুপ
লন্ডনের হাইড পার্কের পাশে ২০ কক্ষবিশিষ্ট এই প্রাসাদ কিনে আলোচনায় আসেন চীনা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হুই কা ইয়ান। পরে কোম্পানি সংকটে পড়ে এবং তিনি গ্রেপ্তার হন।
দ্য পিক, হংকং (২০১৬) – ২৭ কোটি ডলার
ক্রেতা: হংতিয়ান চেন, চুং কেই গ্রুপ
হংকংয়ের অভিজাত ‘দ্য পিক’ এলাকায় বাড়িটি কিনে চেন আলোচনায় আসেন। পরে আর্থিক সংকটে পড়ে তাঁর কোম্পানি এবং বাড়িটি বাজেয়াপ্ত হয়।
সেন্ট্রাল পার্ক সাউথ, নিউইয়র্ক (২০১৯) – ২৪ কোটি ডলার
ক্রেতা: কেন গ্রিফিন, সিটাডেল গ্রুপ
একই ভবনের চারটি তলা কিনে মার্কিন ধনকুবের গ্রিফিন নিউইয়র্কে রেকর্ড গড়েন। বিশ্বজুড়ে তাঁর রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিও এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।
পোর্ট রয়্যাল, ফ্লোরিডা (২০২৫) – ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার
ক্রেতা: অজ্ঞাতনামা
ফ্লোরিডার সবচেয়ে দামি আবাসন হিসেবে পরিচিত এই জলাশয়ে ঘেরা ১৫ একরের বাড়িটির মালিকানা ২০২৫ সালে বদলায়।
ভিলা লে সেদ্রেস, ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা (২০১৯) – ২২ কোটি ডলার
ক্রেতা: রিনাত আখমেতভ, ইউক্রেন
৩৫ একরের এই ঐতিহাসিক সম্পত্তি একসময় বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ডের ছিল। বর্তমানে এটি ইউক্রেনের ধনী আখমেতভের মালিকানায়।
এনসিনো ব্লাফস, ক্যালিফোর্নিয়া (২০২৪) – ২১ কোটি ডলার
বিক্রেতা: জিম জানার্ড, ওকলি
সানগ্লাস ব্র্যান্ড ওকলির প্রতিষ্ঠাতা জেমস জানার্ড এই ৮ বেডরুমের মেগা ম্যানশন বিক্রি করেন, যা মালিবু এলাকার সবচেয়ে দামি আবাসন।
প্যারাডাইস কোভ, ক্যালিফোর্নিয়া (২০২৩) – ১৯ কোটি ডলার
ক্রেতা: বিয়ন্সে ও জে-জি
তাদাও আন্দোর ডিজাইন করা ৩০,০০০ বর্গফুটের উপকূলীয় এই বাড়ি কিনে সংগীত তারকা দম্পতি নতুন রেকর্ড গড়েন।
সেন্ট্রাল পার্ক সাউথ, নিউইয়র্ক (২০২২) – ১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার
ক্রেতা: জোসেফ চাই, আলিবাবা গ্রুপ
চীনের আলিবাবার সহপ্রতিষ্ঠাতা জোসেফ চাই ব্লু পুল ক্যাপিটালের মাধ্যমে এই পেন্টহাউস কিনে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত হন। এটি নিউইয়র্ক শহরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া বাড়ি।