গত বছর ৩১টি ব্যাংকের শেয়ারবাজার বিনিয়োগে ৩,৬০০ কোটি টাকার লোকসান

প্রতিবেদক: গত বছর দেশের ৩১টি ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে সম্মিলিতভাবে ৩,৬০০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। মূলত দুর্বল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত, তহবিলের অপব্যবহার এবং শেয়ারবাজারের মন্দার কারণে এই ক্ষতি হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোরও লোকসান এড়ানো সম্ভব হয়নি। বিদেশি ব্যাংকগুলো মূলত স্থানীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করায় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষতি আনরিয়ালাইজড—অর্থাৎ ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করেনি, কিন্তু বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় পোর্টফোলিওর মূল্য কমেছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতির একটি বড় কারণ ‘জাঙ্ক স্টক’-এ বিনিয়োগ। উদাহরণস্বরূপ, বেশ কয়েকটি ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার ও কারাগারে থাকায় বেক্সিমকো শেয়ারের বাজারদর অর্ধেকে নেমে ৪০ টাকায় দাঁড়ায়।

এছাড়া, দীর্ঘদিন সমস্যায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো—যেমন আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পিপলস লিজিং-এও কিছু ব্যাংক বিনিয়োগ করেছিল। তবে তিনটি ব্যাংক—মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক—শেয়ারবাজার বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সতর্কভাবে করা উচিত। ব্যাংকের মূল দায়িত্ব হলো আমানত পরিচালনা করা, তাই জাঙ্ক স্টকে বিনিয়োগ করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত পেশাদারদের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত।

গত বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় জনতা ব্যাংক, যেটি বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, সামিট পাওয়ার এবং বেস্ট হোল্ডিংস থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে। এছাড়া তাদের কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার জাঙ্ক শেয়ার রয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ক্ষতি ৩৯৮ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৩৫৩ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৩২৬ কোটি টাকা, আর এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের প্রত্যেকের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

এজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও আলী ইমাম বলেন, ব্যাংকগুলোর পোর্টফোলিও পরিচালনার পদ্ধতিতে গভীর সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকগুলো সাধারণত ঋণ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়, যাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের দক্ষতা নেই। ফলে মন্দা বাজারে তারা ভালো রিটার্ন দিতে ব্যর্থ হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক ২০২৪ সালে ১৬ শতাংশ বা ১,০২৬ পয়েন্ট কমেছে, তবে ইমাম বলেন, এটি ক্ষতির প্রধান কারণ নয়। ব্যাংকগুলোর সঠিক পেশাদারদের অভাবে আরও ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।