
প্রতিবেদক: শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সন্তানদের স্কুল–কলেজে আনা–নেওয়া, নিজের অফিসে যাতায়াত কিংবা পরিবার নিয়ে ঘোরাফেরার জন্য অনেকেই প্রথমবারের মতো গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তবে কষ্টের টাকায় গাড়ি কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। নিচে এমন ১০টি বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো প্রথমবার গাড়ি কিনতে যাওয়া একজন ক্রেতার অবশ্যই জানা দরকার।
গাড়ি কেনার উদ্দেশ্য ঠিক করাটাই প্রথম ধাপ। অফিস যাতায়াত বা ছোট পরিবারের শহরের মধ্যে চলাফেরার জন্য হ্যাচব্যাক বা সেডান যথেষ্ট। বড় পরিবার বা দূরপাল্লার ভ্রমণের জন্য বড় গাড়ি উপযোগী।
বাংলাদেশে পুরোনো (রিকন্ডিশন্ড) গাড়ির বাজার বড়। এগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত কম, বিশেষ করে জাপানি টয়োটা ব্র্যান্ড জনপ্রিয়। তবে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ নতুন গাড়ির তুলনায় কিছুটা বেশি। পুরোনো গাড়ি কেনার আগে একজন দক্ষ মেকানিক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেট ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ১৫০০ সিসির পুরোনো গাড়ির দাম শুরু হয় ১০ লাখ টাকা থেকে। আর একই ক্যাটাগরির নতুন গাড়ি কিনতে চাইলে বাজেট রাখতে হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
অনেকেই গাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক ঋণ নিয়ে থাকেন। মাসিক কিস্তির পরিমাণ যেন আপনার মোট আয়য়ের ২০ শতাংশের বেশি না হয়—এটা মাথায় রাখা জরুরি। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত গাড়ির ঋণ দিয়ে থাকে। হাইব্রিড গাড়ির জন্য দামের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।
গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস, ট্যাক্স, চালকের বেতন, সার্ভিসিং ও মাসিক জ্বালানি খরচ—সব মিলিয়ে মাসিক খরচের একটি বড় অংশ গাড়ির পেছনে যায়। তাই সব খরচ হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
গাড়ি কিনলে তার যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়া না গেলে ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই বাজারে সহজলভ্য যন্ত্রাংশ আছে এমন ব্র্যান্ড বা মডেলের গাড়ি কেনার দিকেই ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি থাকে।
গাড়ির মালিকানা, ফিটনেস, করপত্র ও বিমার তথ্য হালনাগাদ আছে কি না, তা নিশ্চিত করা বিশেষ করে পুরোনো গাড়ির ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
গাড়ির জন্য ‘তৃতীয় পক্ষের বিমা’ করা বাধ্যতামূলক। দুর্ঘটনা বা ক্ষতির ক্ষেত্রে বিমা বড় রকমের আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। তাই গাড়ি কিনেই বিমার ব্যবস্থা করে নেওয়া উচিত।
অনেক ক্রেতাই ভবিষ্যতে বিক্রির জন্য ভালো রিসেল ভ্যালু আছে এমন গাড়ি বেছে নেন। বাংলাদেশে পুরোনো গাড়ির বাজারে টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ির চাহিদা ও দাম তুলনামূলক বেশি, যেহেতু এর যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়া যায়।
গাড়ি কেনার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমি কি জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণসহ গাড়ির খরচ চালাতে পারব?আমার প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়িটি উপযুক্ত কি না?ভবিষ্যতে বিক্রি করতে গেলে কি ভালো দাম পাব?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
গাড়ি কেনা শুধুমাত্র স্বপ্ন নয়, এটি একটি বড় আর্থিক সিদ্ধান্তও বটে। তাই আবেগ নয়, বাস্তবতা ও প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে গুছিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।