
প্রতিবেদক: গাড়ির মালিকদের সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের খরচ বহন করতে হয়—যেমন জ্বালানি তেল, চালকের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি। তবে এর বাইরেও কিছু খরচ আছে, যা হঠাৎ করে চাপ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিবছর দিতে হওয়া গাড়ির অগ্রিম কর। সাধারণত একজন গাড়ির মালিককে বছরে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম কর দিতে হয়।
গাড়ির অগ্রিম কর নির্ধারিত হয় ইঞ্জিনের ক্ষমতা বা সিসিভিত্তিতে। যেমন ১৫০০ সিসির কম গাড়ির ক্ষেত্রে কর নির্ধারিত হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ব্যবহৃত গাড়ির প্রায় ৮০ শতাংশই ১৫০০ সিসির নিচে, ফলে এই শ্রেণির গাড়ির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ৭৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও একই হারে কর দিতে হয়। ১৫০০ সিসির বেশি কিন্তু ২০০০ সিসির কম গাড়ির জন্য কর ৫০ হাজার টাকা, ২০০০–২৫০০ সিসির জন্য ৭৫ হাজার, ২৫০০–৩০০০ সিসির জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার, ৩০০০–৩৫০০ সিসির জন্য ২ লাখ টাকা এবং ৩৫০০ সিসির বেশি গাড়ির জন্য বার্ষিক কর সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
এই কর প্রদান করতে হয় প্রতি বছর গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন নবায়নের সময়। নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের রসিদ পাওয়া যায় এবং এজন্য বিআরটিএ অফিসে যেতে হয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই অগ্রিম কর আদায় করে মূলত কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। প্রথমত, আয়কর ফাঁকি রোধ—কারণ অনেক ব্যক্তি প্রকৃত আয় গোপন করেন, অথচ ব্যক্তিগত গাড়ি রাখা বিলাসিতার ইঙ্গিত দেয়। দ্বিতীয়ত, করের উৎস বাড়ানো—সরকারের উন্নয়নমূলক ব্যয় মেটাতে রাজস্ব প্রয়োজন। তৃতীয়ত, সহজ কর সংগ্রহ—গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস নবায়নের সময় কর আদায় হওয়ায় এনবিআরকে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতে হয় না। চতুর্থত, বছর শেষে কর সমন্বয়ের সুবিধা—এটি অগ্রিম আয়কর হিসেবে ধরা হয়, পরে রিটার্নে এই কর সমন্বয় করা যায়। এবং পঞ্চমত, আয়ের ধারণা নিরূপণ—গাড়ির সিসিভিত্তিক কর দেখে একজন মালিকের আর্থিক সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যা করজাল সম্প্রসারণে সহায়ক।