
প্রতিবেদক: গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন করে ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এর ফলে ব্যাংকটির পরিচালনা, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে মালিকানায়—ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, আর ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
পরিচালনা পর্ষদের কাঠামোতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হবে ১৩ সদস্যের। এর মধ্যে ৯ জন হবেন ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত। বাকি ৪ জনের মধ্যে ৩ জন হবেন মনোনীত পরিচালক, যাঁদের মনোনয়ন দেবেন ওই নির্বাচিত ৯ জন। এই মনোনীতদের মধ্যে একজন হবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ অর্থনীতি বা নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক, একজন নারী সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ), এবং একজন নারী অধিকারবিষয়ক গবেষক, আইনজীবী বা স্বীকৃত অধিকারকর্মী। সরকারের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পর্ষদে থাকবেন।
চেয়ারম্যান নিয়োগের পদ্ধতিও বদলানো হয়েছে। আগে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও, এখন পর্ষদ সদস্যদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে সরকার আর মনোনীত কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে পারবে না; বরং পর্ষদ সদস্যরাই কাউকে অস্থায়ী দায়িত্বে অনুমোদন দেবেন।
এ ছাড়া, পরিচালকদের মেয়াদ তিন বছর আগেও ছিল, এখনো তাই রাখা হয়েছে। তবে কেউ পরপর দুই মেয়াদে থাকতে পারলেও, পুনরায় পরিচালক হতে হলে তিন বছর বিরতি দিতে হবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল গত ১৭ এপ্রিল, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। এরপর গত সোমবার এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অধ্যাপক ইউনূসকে রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, তখন গ্রামীণ ব্যাংককে তাঁর মূল দর্শন থেকে সরিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। নতুন অধ্যাদেশ সেই পূর্বের অবস্থা আংশিকভাবে পুনঃস্থাপন করেছে। এখন গ্রামীণ ব্যাংক শুধু ভূমিহীন নয়, ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের সব ধরনের অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পর গত বছরের ২০ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সরকার। পরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনিই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করেন, যা এখন বাস্তবায়নের পথে।