
প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত নতুন মাশুলের প্রজ্ঞাপন অবশেষে জারি করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে এ প্রজ্ঞাপন জারি করে সোমবার থেকে নতুন মাশুল কার্যকরের কথা জানানো হয়। সরকারি প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের তুলনায় গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কনটেইনার পরিবহনের খরচ। এখন থেকে প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা গুনতে হবে।
গত ২৪ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। তবে একসঙ্গে এত বেশি হারে মাশুল বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছিলেন ব্যবহারকারীরা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ নিয়ে আলোচনা হলেও ব্যবহারকারীদের আপত্তি বিবেচনায় না নিয়েই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত সিদ্ধান্তই বহাল থাকল। ব্যবহারকারীদের আশঙ্কা, হঠাৎ এত বেশি মাশুল বাড়ানো হলে এর চাপ পড়বে সরাসরি ভোক্তার ওপর এবং রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। বিশেষ করে ভবিষ্যতে অধিকাংশ টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের হাতে গেলে তারা বড় সুফল পাবে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি ও বিজিএমইএ পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে। কারণ, কাঁচামাল আমদানির সময় এক দফা এবং প্রস্তুত পোশাক রপ্তানির সময় আরেক দফা বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। এতে দুই স্তরে খরচ বাড়বে, যা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। অন্যদিকে সরকারের দাবি, ১৯৮৬ সালের পর এবারই প্রথম মাশুল বাড়ানো হলো, আর বাড়ানোর পরও তা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
নতুন হার অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারে যেখানে গড়ে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা মাশুল দিতে হতো, এখন তা দাঁড়াবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি কনটেইনারে গড়ে ৩৭ শতাংশ বাড়তি খরচ হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ডলারে মাশুল আদায় করে বলে ডলারের বিনিময় হার বাড়লে খরচও আরও বাড়বে। যেমন আমদানি কনটেইনারে মাশুল বাড়বে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কনটেইনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা। কনটেইনার ওঠানো–নামানোর খরচ বেড়ে গেছে সবচেয়ে বেশি—আগে ছিল ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার, এখন তা ৬৮ ডলার, অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার টাকা বেশি।
প্রতি কেজি কনটেইনার পণ্যে আগে গড়ে মাশুল ছিল ১ টাকা ২৮ পয়সা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭৫ পয়সায়, অর্থাৎ বাড়তি ৪৭ পয়সা। যেহেতু সমুদ্রপথে দেশের ৯৯ শতাংশ আমদানি–রপ্তানি কনটেইনারের মাধ্যমে হয়, তাই এ খাতেই প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। কনটেইনার ছাড়া সাধারণ পণ্যের ক্ষেত্রেও চাপ বাড়বে। বর্তমানে কেজিপ্রতি ৩৫ পয়সা মাশুল দিতে হলেও নতুন হারে তা দাঁড়াবে ৪৯ পয়সায়, যা গড়ে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি। তবে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে প্রভাব তুলনামূলক কম হবে, কারণ এসব জাহাজের বেশির ভাগই সাগরে নোঙর করে পণ্য খালাস করে।