
প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের টানা কলমবিরতির রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হচ্ছে ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটি। এর ফলে শুল্কায়ন কার্যক্রম আবারও বন্ধ হয়ে পড়বে, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম চালু রাখবে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা শুল্ক পরিশোধ করে পণ্য খালাস নিতে পারবেন না, ফলে ড্যামারেজ ও কনটেইনার ভাড়াসহ বাড়তি খরচ বহন করতে হবে।
কলমবিরতির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম ১৪ মে থেকে বন্ধ ছিল। এর ফলে বন্দরে পণ্যের জট তৈরি হয়েছে। সাধারণত চার দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না করলে অতিরিক্ত ড্যামারেজ ফি দিতে হয়। এই ফি তিনটি স্ল্যাবে ভাগ করা হয়েছে, যা কয়েকগুণ বেড়েছে-প্রথম সাতদিন: $২৪ (পূর্বে $৬),পরবর্তী ১৩ দিন: $৪৮ (পূর্বে $১২),অতঃপর প্রতিদিন: $৯৬ (পূর্বে $২৪)
প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসি’র এমডি আমিরুল হক বলেন, কলমবিরতির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই ছুটির কারণে আরেক দফা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। শিল্পোদ্যোক্তাদের মতে, পণ্য খালাসে বিলম্বের দায় ব্যবসায়ীদের না হলেও তাদেরই চড়া মাশুল গুনতে হয়।
বিএসআরএম’র এমডি আমের আলীহুসাইন বলেন, ‘ব্যাংকিং ও কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উৎপাদন ও খালাসে ছন্দপতন ঘটবে। একটি যন্ত্রাংশ আটকে গেলে পুরো মেশিনারিজই থেমে যেতে পারে।’
পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। এশিয়ান-ডাফ গ্রুপ’র এমডি আবদুস সালাম বলেন, একটি অ্যাকসেসরিজের দেরিতে পুরো গার্মেন্টস উৎপাদন থমকে যেতে পারে। প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ’র এমডি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর জানান, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি আদেশ কমছে, এর মধ্যে শুল্কায়নে অচলাবস্থা লিড টাইমকে চ্যালেঞ্জে ফেলবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০–৩২ হাজার কনটেইনার থাকলে তা স্বাভাবিক ধরা হয়, কিন্তু ইতোমধ্যে তা ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এমএসসি বাংলাদেশ’র আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, জাহাজ খালি না হলে তাদের খরচ বাড়ছে, আর আন্তর্জাতিক অপারেটররা বাংলাদেশের বন্দরকে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করছে।
পোশাক, প্লাস্টিক, সিরামিক, প্রসাধনী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধসহ অধিকাংশ খাতের কাঁচামাল বন্দরে আটকে আছে। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, প্রতিদিন ১,০০০ ডকুমেন্টস ক্লিয়ার হওয়ার পরিবর্তে মাত্র ৩০০টি হচ্ছে। ফলে পণ্য ছাড়ে দীর্ঘ সময় লাগছে এবং ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে অনাস্থার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
বিজিএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় ওভারটাইম বাড়ছে এবং ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রত্যাশা করছেন—সরকার যদি ঈদের ছুটির মধ্যেও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু রাখে, তাহলে অতিরিক্ত কাজ করে ক্ষতি কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবল চট্টগ্রাম বন্দর চালু থাকলেই হবে না; কাস্টমস, বন্ড কমিশনারেট ও ব্যাংকও খোলা রাখতে হবে। নীতিনির্ধারকদের কাছে এ সংকট শুধু ছুটি নয়, দেশের অর্থনীতি ও রফতানি সক্ষমতার ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ।