চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটে নতুন সিদ্ধান্ত: জাহাজ কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্টদের আপত্তি

প্রতিবেদক :চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বেড়ে যাওয়ায় জাহাজের সংখ্যা কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে প্রতিদিন একের পর এক পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজ আসছে, খালাস শেষে রপ্তানি পণ্য নিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু পণ্য পরিবহনের ক্রমবর্ধমান চাপে সামাল দিতে না পারায় এই জাহাজজট তৈরি হয়েছে। তাই বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ উদ্যোগে বিস্ময় প্রকাশ করেছে শিপিং এজেন্টরা। তারা বলছেন, দুর্যোগ ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক বন্দরে চলাচলরত জাহাজ কমানোর নজির নেই। বরং আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে জাহাজ ভেড়াতে শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়, বিপণন দল সক্রিয় থাকে। চট্টগ্রামে হচ্ছে তার উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে নিয়মিত চলাচলকারী কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা ১১৮টি। এসব জাহাজ সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে চলাচল করে। গত ২০ জুলাই বন্দরের এক বৈঠকে ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, দীর্ঘজটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো সহযোগিতা করছে না শিপিং এজেন্টরা। এখনও পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম প্রত্যাহারের তালিকা জমা দেয়নি তারা। বরং বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ একে তুলনা করেছেন “মাথাব্যথায় মাথা কেটে ফেলার” সঙ্গে। তাঁর মতে, জাহাজ সংখ্যা কমালে সমস্যা কমবে না, বরং প্রকৃত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা দরকার।

বর্তমানে জাহাজজট এতটাই প্রকট যে, একেকটি ক্রেনযুক্ত জাহাজকে জেটিতে ভিড়তে চার থেকে দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঈদুল আজহার ছুটি, পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমস শাটডাউন এবং শুল্ক সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যা জাহাজজটের অন্যতম কারণ।

শিপিং কোম্পানিগুলো আশঙ্কা করছে, জাহাজ কমালে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা বন্দরে বাংলাদেশগামী কনটেইনারের জট তৈরি হবে। একইভাবে ইউরোপ ও আমেরিকামুখী রপ্তানির কনটেইনার জমে থাকতে পারে। জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের কর্মকর্তা মুনতাসীর রুবাইয়াত বলেন, জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, ভাড়া বাড়বে, আর ভোগান্তি বাড়বে সাধারণ ভোক্তাদের ওপরেই।