চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক ফাঁকি, ভুয়া নথি ও জাল সই ব্যবহার করে কনটেইনার খালাসের চেষ্টা

প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরে ভুয়া নথি ও জাল সই ব্যবহার করে শুল্ক না দিয়ে একটি কনটেইনার খালাসের চেষ্টা চালানো হয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সতর্কতায় কনটেইনারটি আটক করা হয়। কায়িক পরীক্ষায় দেখা যায়, এতে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের বেডশিট, পর্দা ও সোফার কাপড় ছিল।

চালানটি সাভারের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ঈগল টেক্সটাইল-এর নামে চীন থেকে আমদানি করা হয়। ২৭ টন ওজনের এ চালানটি গত ১৮ মে বন্দরে পৌঁছালেও কাস্টমস সার্ভারে কোনো তথ্য আপলোড করা হয়নি এবং খালাসের জন্যও কোনো উদ্যোগ নেয়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ঈগল টেক্সটাইল চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিআইএন ও ভ্যাট নিবন্ধন সম্পন্ন করে এবং এরপর থেকে ৮টি চালানে প্রায় ১৮০ টন ফেব্রিক্স আমদানি করে। তবে একটি চালান ছাড়া বাকি কোনোটিরই তথ্য কাস্টমস সার্ভারে জমা দেওয়া হয়নি। কেবল ২২ ডলারের সমমূল্যের ৩টি নমুনা চালান ঢাকা কাস্টমস হাউস থেকে খালাস করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো রপ্তানির তথ্যও নেই।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার কাজী রায়হানুজ্জামান জানান, ঈগল টেক্সটাইলের নামে আমদানি তথ্য থাকলেও বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি। কনটেইনারটি রপ্তানিমুখী পণ্যের ঘোষণা দিয়ে আনা হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে এমন পণ্য ছিল যা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পড়ে না। ফলে শুল্ক ও জরিমানা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ফাঁকি দিতে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটির নামে বাকি সাতটি কনটেইনার বন্দরে আছে কি না, না কি আগেই জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস হয়ে গেছে—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে।

গত ৯ জুলাই রাতে ভুয়া নথি ব্যবহার করে কনটেইনারটি খালাসের চেষ্টা চলাকালে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা সন্দেহবশত সেটি আটকে দেন এবং ৪ জনকে আটক করেন। নিরাপত্তা কর্মী উৎপল ধর বাদী হয়ে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।

আটক রহিম নিজেকে এম হক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মী দাবি করেন, তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোজাম্মেল হক জানান, রহিম নামে তাঁর কোনো কর্মী নেই। তিনি ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছেন এবং এ নামে কোনো লাইসেন্সও ইস্যু হয়নি।

বন্দর থানার ওসি কাজী মোহাম্মদ সুলতান আহসান জানান, চক্রটি প্রতিটি ধাপে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। আটকরা মূল হোতা নয়, তারা কাদের হয়ে কাজ করেছে তা জানতে তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূল পরিচালকদের পরিচয় উদঘাটনের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সফল তৎপরতা এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সতর্ক নজরদারিই বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতি রোধ করতে সক্ষম হয়েছে।