
প্রতিবেদক: দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এখনো চাপের মুখে রয়েছে বলে মনে করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। তবে সংগঠনটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ অর্থনীতি ধীর গতিতে হলেও পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার (২৮ মে) এমসিসিআই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের ধারা কিছুটা ইতিবাচক, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করছে। গ্রামীণ অর্থনীতির গতি ফিরছে এবং কৃষি ও শিল্প খাতেও প্রবৃদ্ধির কিছুটা ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি থাকলেও কৃষিঋণ আগের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কমেছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৭৬ শতাংশ।
এমসিসিআই মনে করছে, বিগত সরকারের সময় ব্যাংক খাতে বড় ধরনের অনিয়ম এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতার কারণে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। অতীতের ঋণ কেলেঙ্কারি অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
তবে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বজুড়ে চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধাবস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমসিসিআই বলছে, অর্থনীতি এখনো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) এর প্রবাহ ২৬ শতাংশ কমে গেছে। প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বিদেশি ঋণের অর্থছাড়ও কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি।
চলতি বছর মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৯.৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯.৩২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি তিন মাস নিম্নমুখী থাকার পর আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
এদিকে, খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে উল্লেখ করা হয়, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০.৩ লাখ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.৮০ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনের উপসংহারে এমসিসিআই বলছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন—ব্যাংক খাত সংস্কার,নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা,এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা।