
প্রতিবেদক: কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চামড়া শিল্পনগরীতে চলছে ট্যানারিগুলোর প্রস্তুতির শেষ সময়ের ব্যস্ততা। সাভারে অবস্থিত ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের কারখানাগুলো প্রস্তুত হচ্ছে বছরের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়া সংগ্রহের মৌসুমকে ঘিরে। তবে এ বছর ঈদের আগে কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ায় তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং স্বাভাবিক রপ্তানি ও স্থানীয় বিনিয়োগ হুমকির মুখে ফেলবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রস্তুতি ভালো। তিনি আশা করছেন, প্রায় ১ কোটি থেকে ১ কোটি ৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তবে আর্থিক সংকট এবং চার বছরেও চামড়া শিল্পনগরের সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) পূর্ণতা না পাওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিটিএ সূত্র জানায়, সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে ইতোমধ্যে ১৪২টি ট্যানারি উৎপাদনে রয়েছে। কিন্তু রপ্তানি প্রণোদনার প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এখনো বকেয়া রয়েছে, যার ফলে অনেক ট্যানারি মালিক আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদনের কারণে দেশের বাজারে সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার ট্যানারিরা যদি স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত চামড়া না কিনতে পারেন, তবে সীমান্তবর্তী জেলা থেকে সেসব চামড়া বিদেশে রপ্তানি হয়ে যেতে পারে। এতে করে স্থানীয় শিল্পের কাঁচামালের সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলইএ) ভাইস চেয়ারম্যান এম এ আওয়াল বলেন, “কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার স্থানীয় বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “ঈদের রপ্তানির পরে কাঁচা চামড়ার ঘাটতির কারণে ট্যানারিগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন কমে যাবে এবং রপ্তানি ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।”
উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, কাঁচা চামড়ার আগাম রপ্তানি চালু থাকলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের লেদার খাতের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।