
অনলাইন ডেক্স: একই বিষয় ভিন্ন ব্যক্তি ভিন্নভাবে দেখে ও ব্যাখ্যা করে। দৃষ্টিভঙ্গির এই পার্থক্যের কারণেই বদলে যায় চাক্ষুষ ও অন্তর্দৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিত। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে ‘পারসপেক্টিভ’ শিরোনামে এক বিশেষ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাণে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে নির্মাতারা চিত্রকলার পরিপ্রেক্ষিত থেকে সহায়তা নিতেন। চিত্রকলার ধারণা বরাবরই চলচ্চিত্রকে নান্দনিকভাবে সমৃদ্ধ করে এসেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ৩৪ জন শিল্পীর কাজ নিয়ে এ প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে।
শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরতে প্রতীকীভাবে পিক্সেলের ফর্ম ব্যবহার করেছেন। অমিত নন্দীর চিত্রে প্রকাশ পেয়েছে নস্টালজিয়া।
জাহিদ মুস্তাফা, রশীদ আমিন ও জাহাঙ্গীর আলমের ছবিতে মনোজাগতিক নিসর্গ চিত্রণের বর্ণবৈচিত্র্য দর্শকের আত্মায় প্রশান্তি এনে দেয়। সুমন ওয়াহিদের ‘মৃত্যু’ ছবিতে চলচ্চিত্রের মতো ধারাবাহিক গল্প রয়েছে, যেখানে করোনা সময়ের খণ্ডচিত্রের বাস্তবতা কোলাজে ফুটে উঠেছে।
অর্থের গভীরতা ও প্রতীকী ব্যঞ্জনা পাওয়া যায় অস্মিতা আলম, স্বপন কুমার সানা ও আবদুস সাত্তারের কাজে। ঝোটন চন্দ্র রায়ের ‘অনিশ্চয়তা’ চিত্রকর্মটি এ অঞ্চলের ভাগ্য গণনার ঐতিহাসিক দলিল হয়ে উঠেছে, যা সমসাময়িক ঘটনার প্রতিচ্ছবি হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়।
শেখ আফজালের ছবিতে ফুটে উঠেছে বাঙালি মা ও শিশুর চিরন্তন মমত্বগাথা, আর রফিকুন নবীর চিত্রে চিরচেনা কাকের আলাপন—যার মধ্যেও হয়তো লুকিয়ে আছে এক বিশেষ বার্তা।
আনিসুজ্জামানের চিত্রকর্মে রয়েছে স্থাপত্যের জটিলতা, আর সৈয়দ ইকবালের কাজে রং, আলো-ছায়া ও টেক্সচারের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ভিন্ন আখ্যান।
প্রদর্শনীর শিল্পীদের বয়স, অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। বিশেষত, তাঁদের কাজে বাংলাদেশি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী উপাদান, নগরায়ণ, প্রযুক্তির প্রভাব ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন রয়েছে। তবে অনেক শিল্পীর চিত্রকর্মে স্বতন্ত্র দেশজতার ঐক্য কিছুটা অনুপস্থিত বলে মনে হয়েছে।
লুৎফা মাহমুদার কিউরেশনে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীটি আজই শেষ হচ্ছে।