
প্রতিবেদক: চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া কয়েক বছর আগেই শুরু করেছিল অ্যাপল। তবে এবার বিষয়টি আরও জোরালো হলো। চলতি বছরের জুন প্রান্তিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হওয়া আইফোনের বেশিরভাগই যাবে ভারত থেকে—এমনটাই জানিয়েছেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে কার্যত বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন বাস্তবতায় ভারতের গুরুত্ব বাড়ছে বহুগুণে।
শুধু আইফোন নয়, আইপ্যাড, ম্যাক, অ্যাপল ওয়াচ ও এয়ারপডের মতো জনপ্রিয় পণ্যগুলোর মূল উৎপাদন কেন্দ্র হতে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। অর্থাৎ অ্যাপল এখন চীনকেন্দ্রিক উৎপাদন থেকে কৌশলগতভাবে বেরিয়ে আসছে।
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময় থেকেই অ্যাপল বিকল্প বাজার খুঁজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ফক্সকন ভারতে আইফোন উৎপাদন শুরু করে। এখন তা পূর্ণ মাত্রায় বিস্তার লাভ করছে।
ডয়চে ভেলের তথ্য অনুযায়ী, ভারত এখন আইফোনের অন্যতম বড় বাজার।
এখানে উৎপাদন করলে খরচ কম থাকে, যা স্থানীয় বাজারে দাম কমিয়ে বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রেও খরচ সাশ্রয় হয়।
টিম কুক জানিয়েছেন, জুন ত্রৈমাসিকে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পণ্য যাবে, তার ওপর ২০ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে—মোটে ১৪৫ শতাংশ। এতে করে অ্যাপলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি খরচ প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার (৯০ কোটি ডলার) পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য ভারতকে ব্যবহার করাই এখন অ্যাপলের জন্য সবচেয়ে যুক্তিসংগত কৌশল। বিশেষ করে, ৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতের পণ্যে শুল্ক আরোপ স্থগিত রয়েছে, যা অ্যাপলকে স্বস্তি দিচ্ছে।
এ অবস্থায় মার্চের শেষ সপ্তাহে মাত্র তিন দিনের মধ্যে আইফোনসহ পাঁচটি বিমান পণ্য বোঝাই করে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে অ্যাপল। একই কাজ করা হয়েছে চীনের কিছু কারখানার ক্ষেত্রেও।
এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের মূল কারণ, ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক এড়ানো।
আড়াই হাজার ডলারে পৌঁছতে পারে চীনে তৈরি আইফোন ১৪৫ শতাংশ শুল্কের বাস্তবতায় চীনে উৎপাদিত একটি আইফোনের দাম হতে পারে প্রায় আড়াই হাজার ডলার। ফলে অ্যাপল এখন চাইছে—ভারত থেকেই আইফোনের সিংহভাগ উৎপাদন করা হোক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত অ্যাপলের জন্য একটি ‘তুরুপের তাস’ হতে চলেছে। শুধু উৎপাদন নয়, বাজার হিসেবেও ভারতের ভূমিকাই ভবিষ্যতে কোম্পানির প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।