
প্রতিবেদক: চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক) এর চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ জানিয়েছেন, তার ব্যাংক বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে, যাতে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশে রফতানির জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং মানবসম্পদ, চীন ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির জন্য একটি উৎপাদন কেন্দ্র রূপান্তরিত করতে সক্ষম। তিনি শীর্ষ চীনা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানান এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্যিক করিডোর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে চীনের পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। তিনি জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ বড় আকারে নতুন বন্দর তৈরি করছে, যা শুধু দেশীয় অর্থনীতির জন্য নয়, বরং নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্যও সহায়ক হবে।
চেন হুয়াইউ মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার বাজারের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। চীনের বিপুলসংখ্যক কোম্পানি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করছে এবং তার ব্যাংক বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ ও উৎপাদন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে। এছাড়া, টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো নির্মাণেও এক্সিম ব্যাংক সহায়তা প্রদান করবে।
ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উদাহরণ তুলে ধরে চেন বলেন, চীনা ও পশ্চিমা উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে তার ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করতে হবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা ভিয়েতনাম থেকে শিখব।”
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের দ্রুত ছাড়করণ এবং নতুন অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য সহায়তা চান। বিশেষত, দাশেরকান্দি স্যুয়েজ প্লান্টের মতো প্রকল্পে সহায়তা এবং প্রকল্প ব্যয় কমাতে এক্সিম ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি ফি কমানোরও আহ্বান জানানো হয়। চেন হুয়াইউ জানান, তার ব্যাংক এসব প্রস্তাব যাচাই করে দেখবে এবং বাংলাদেশকে চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে (আরএমবি) সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুব শিগগিরই পুনরায় বৈঠকে বসবেন, যাতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।