
প্রতিবেদক: থাইল্যান্ডে বেড়ে ওঠা পংসাকর্ন পংসাকের প্রিয় পানীয় ছিল কচি নারকেলের পানি। দেশজুড়ে রাস্তার দোকানে সহজলভ্য এই পানীয় তার দেশে স্বাভাবিক হলেও, বিদেশে গিয়ে তিনি সেই স্বাদ খুঁজে পাননি। সেই অভাব থেকেই তাঁর মনে জন্ম নেয় এক ব্যবসায়িক ধারণা—থাই নারকেলের পানি বোতলজাত করে বিদেশি বাজারে পৌঁছে দেওয়ার।
৪৫ বছর বয়সী পংসাকর্ন ব্যাংকক থেকে ফোর্বস ম্যাগাজিনকে অনলাইন সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের নারকেলের ঘ্রাণ দারুণ। তাই ভাবলাম, কেন এই ভালো জিনিসটা আমরা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরব না?” ১২ বছর আগে তিনি জেনারেল বেভারেজ কোম্পানি গড়ে তোলেন এবং আইএফ ব্র্যান্ডের নামে নারকেলের পানি বাজারে নিয়ে আসেন। বর্তমানে সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফবিএইচের মাধ্যমে এই পানীয় বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে।
চীনের বাজারে আইএফ সবচেয়ে বেশি বিক্রিত নারকেলের পানির ব্র্যান্ড। সাংহাইভিত্তিক চায়না ইনসাইটস ইন্ডাস্ট্রি কনসালট্যান্সি অনুযায়ী, আইএফ একাই ২৮ শতাংশ এবং তাদের আরেক পণ্য ইনোসোকো ৬ শতাংশ বাজার দখল করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছে স্থানীয় ডেলগারডেন, চিংশাং ড্রিংক, মার্কিন ভিটা কোকো এবং থাইল্যান্ডের মালি গ্রুপের মালি কোকো।
পংসাকর্ন আত্মবিশ্বাসী, এই অবস্থান টেকসই হবে। ২০২৪ সালে কোম্পানির বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৮ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি, এবং নিট মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩৩ মিলিয়ন ডলার। এই আয়ের ৯৭ শতাংশই আসে চীনের বাজার থেকে। চীনে সাফল্যের পর পংসাকর্ন এবার হংকং শেয়ারবাজারে আইএফবিএইচ তালিকাভুক্ত করেন, ১৪৫ মিলিয়ন ডলার তোলেন। তিনি এখনও কোম্পানির ৬০ শতাংশ শেয়ার রাখেন এবং শেয়ারমূল্য এখন ৭০০ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির কারণে নারকেলের পানি ও উদ্ভিদভিত্তিক পানীয়ের চাহিদা বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের ইউরোমনিটর অনুযায়ী, ২০১৮-২০২৪ সালের মধ্যে এই খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ, যা সফট ড্রিংকস শিল্পের গড় ৬.৬ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। পংসাকর্নের লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করা, যেখানে বর্তমানে রাজস্ব আসে খুব সামান্যই।
চীনে সাফল্যের জন্য আইএফ কৌশলগতভাবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৫ সালে প্রথম হংকংয়ে বিক্রি শুরু হয়, ২০১৭ সালে চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। নতুন স্বাদের ভ্যারিয়েশন এবং জনপ্রিয় তারকা শিয়াও ঝানকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। কোম্পানির মডেল হলো অ্যাসেট-লাইট—উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত বেশির ভাগ কাজ আউটসোর্স করা হলেও মান নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে করা হয়।
পংসাকর্নের ব্যবসা শুরু হয়েছিল পারিবারিক উদ্যোগ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক শেষে তিনি সুয়ান গ্রুপে কাজ করেন। ২০১১ সালে দেশে ফিরে জেনারেল বেভারেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে বিভিন্ন ফলের জুসে মনোযোগ দিলেও ২০১৫ সালে নারকেলের পানিতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। কোভিড মহামারির সময় স্বাস্থ্যকর পানীয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আইএফবিএইচ আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
বর্তমানে কোম্পানির রাজস্বের প্রায় ৯৮ শতাংশ আসে নারকেলের পানি থেকে। ভবিষ্যতে পংসাকর্ন স্বাস্থ্যকর পানীয়, উদ্ভিদভিত্তিক স্ন্যাকস এবং বিকল্প প্রোটিন পণ্যে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। তিনি মনে করেন, নারকেলের পানি যদিও ছোট খাত, তবে এর সম্ভাবনা কমলার রসের মতো। তিনি নতুন পানীয় বাজারে আনতে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বরাদ্দ রেখেছেন।