চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা: বড় অগ্রগতির বার্তা ট্রাম্পের, শুল্ক যুদ্ধে স্বস্তির আভাস

প্রতিবেদক: সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা বড় ধরনের অগ্রগতি এনে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আজ ভালো বৈঠক হয়েছে। অনেক বিষয়ে আলোচনা ও ঐকমত্য হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটিকে নতুনভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলকভাবে সাজানো হয়েছে। আমরা চাই, চীন মার্কিন ব্যবসার জন্য দুয়ার খুলে দিক। বড় অগ্রগতি হয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরে জেনেভায় এই আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির প্রমুখ এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। চীনের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির সহকারী প্রধানমন্ত্রী হি লিফেং। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি এবং সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া বৈঠকটিকে সমস্যার সমাধানে বড় পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে তারা জানিয়েছে, চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছাতে ধৈর্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন।

এর আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সতর্ক করে বলেছিলেন, এই বৈঠক থেকে চূড়ান্ত চুক্তির আশা না করাই ভালো। তবে এটিকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন তিনিও।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশের জন্য ঘোষিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হ্রাস পাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এমন উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ফলে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে শুল্কের হার কমিয়ে ৫০ শতাংশে আনা প্রয়োজন। ট্রাম্প ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি চীনের পণ্যে শুল্ক ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনার চিন্তা করছেন, তবে শর্ত থাকবে—চীনকে বাজার উন্মুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘চীনের পণ্যে ৮০ শতাংশ শুল্ক যথোপযুক্ত মনে হয়; এখন বাকিটা অর্থমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে।’

তবে ১৪৫ শতাংশ শুল্কযুক্ত চীনা পণ্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে এবং সাময়িকভাবে শুল্ক কমলেও ভোক্তা পর্যায়ে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে না। গোল্ডম্যান স্যাক্স বলছে, এই বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তামূল্য সূচক ৪ শতাংশে উঠতে পারে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনিদের দৈনন্দিন জীবনে চীনা পণ্যের ব্যবহার এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, এর আমদানি কমে গেলে মার্কিন অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে।

ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক আমদানি অন্তত ২০ শতাংশ কমবে। চীন থেকে আমদানি কমবে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ, এমনটাই মনে করছে বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান।

এই পরিস্থিতি চীনের উৎপাদন খাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চীনের কারখানার উৎপাদন গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেইজিংয়ে অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।

শুক্রবার স্কট বেসেন্ট জেনেভায় পৌঁছানোর খবরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যথাক্রমে বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এই দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, পরবর্তী ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির সম্মিলিত জিডিপির চেয়েও তাদের সম্মিলিত জিডিপি বেশি।