
প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে। কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় ব্যাংকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ সমন্বিতভাবে ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে তাদের মোট মুনাফা দাঁড়ায় ১,৪৩২ কোটি টাকায়, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮২৮ কোটি টাকা।
একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) ভিত্তিতে ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ৬৬ শতাংশ বেড়ে ১,২১৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে (২০২৩ সালে যা ছিল ৭৩০ কোটি টাকা)। এ সময় গ্রাহক আমানতে ৩৪ শতাংশ ও ঋণ বিতরণে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ব্র্যাক ব্যাংক, যা ব্যাংকিং খাতে ইন্ডাস্ট্রি গড়ের চেয়েও বেশি।
২০২৪ সালে ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগে যুক্ত হয়েছে ৩.৫ লাখ নতুন গ্রাহক, ফলে এ বিভাগের গ্রাহকসংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ লাখ। এসএমই খাতে যুক্ত হয়েছে ১ লাখের বেশি নতুন সিএমএসএমই গ্রাহক। করপোরেট ব্যাংকিংয়ে বর্তমানে রয়েছে ৯,৫০০ ক্লায়েন্ট।
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে ধারাবাহিক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৪ সালে খোলা নতুন অ্যাকাউন্টের ৭৭ শতাংশই হয়েছে ইকেওয়াইসি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। তাদের আস্থা অ্যাপের গ্রাহক এখন ৮ লাখ ছাড়িয়েছে, এবং অ্যাপের মাধ্যমে বছরে লেনদেন হয়েছে ২.৭ কোটি, যার আর্থিক পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংক শুধুমাত্র আর্থিক সাফল্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ব্যাংকটি জামানতবিহীন সিএমএসএমই ঋণের ৪৩ শতাংশই এককভাবে অর্থায়ন করেছে। ‘উদ্যোক্তা ১০১’ কর্মসূচির আওতায় ২১০ জন নারী উদ্যোক্তা সহায়তা পেয়েছেন। কৃষিখাতে বিতরণ করেছে ৯৭৯ কোটি টাকার ঋণ।
২০২৪ সালে ব্যাংকটি রফতানি ও আমদানিতে যথাক্রমে ২.০৬ ও ৩.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। সবুজ প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবেশগত উন্নয়নে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
২০২৪ সালে কর প্রদানের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক সরকারের রাজস্ব কোষাগারে ১,৯৩৯ কোটি টাকা জমা দিয়েছে, যা একটি দায়িত্বশীল করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নজির।
দেশব্যাপী ২৬৩টি শাখা ও উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস এবং ১,১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক এখন দেশের অন্যতম বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল রূপান্তর, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি শক্তিশালী ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক আর্থিক খাতে এক শক্তিশালী বছর পার করেছে। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্যাংকটি সমন্বিতভাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ মোট ১,৪৩২ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা অর্জন করে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮২৮ কোটি টাকা। একক ভিত্তিতে নিট মুনাফা ৭৩০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১,২১৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় ২০২৩ সালের ৪.৩০ টাকা থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে হয়েছে ৬.৯৫ টাকা। একইভাবে শেয়ারপ্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) ৩৭.৬০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪.১১ টাকায়। শেয়ারপ্রতি নিট ক্যাশ ফ্লো ২০২৩ সালের ৩৭.০৫ টাকা থেকে ২০২৪ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৯১ টাকায়।
ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংক উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও ২০ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ব্যাংকিং খাতে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। একই সময়ে গ্রাহক আমানত বেড়েছে ৩২ শতাংশ, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজও ৭ শতাংশেই সীমাবদ্ধ ছিল।
সমন্বিত রিটার্ন অন ইকুইটি ১৯.৮০ শতাংশ এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (ROA) ১.৫১ শতাংশে পৌঁছেছে। ঋণ প্রবৃদ্ধি, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা ও নন-ফান্ডেড আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকের মোট সমন্বিত আয় ২০২৪ সালে ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোয় কৌশলগত বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে পরিচালন ব্যয় ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকেও গুরুত্ব দিয়েছে। আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারি ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ায় ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন ২০২৩ সালের ৩.৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২.৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন ২০২৩ সালের ৫,৫০৯ কোটি টাকা থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৭,১৪৩ কোটি টাকা।
২০২৪ অর্থবছরের এ অসাধারণ অর্জন সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, “এই অর্জন গ্রাহক, সমাজ ও দেশের প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। উদ্ভাবন, ক্ষমতায়ন এবং দেশের টেকসই উন্নয়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও বলেন, “বছরের পর বছর ধরে অর্জিত সাফল্যের জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের গ্রাহকদের, পরিচালনা পর্ষদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি, যাঁদের আস্থা, দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতাই আমাদের পথ চলার প্রেরণা।