চ্যালেঞ্জের মাঝেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, তবে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা

প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ২১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৮৩ শতাংশ বেশি।

তবে এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ওই মাসে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০২ কোটি ডলারে, যা চলতি অর্থবছরের একক মাস হিসেবে সর্বনিম্ন। যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রপ্তানি ছিল ২৯৯ কোটি ডলার, সেক্ষেত্রে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৮৩ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি রপ্তানি হলেও এপ্রিল মাসে তা কমে গেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আজ সোমবার প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, এবং চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি কমেছে।

রপ্তানিকারকদের মতে, এপ্রিলের শুরুতে ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে কারখানাগুলো ৮ থেকে ১০ দিন বন্ধ ছিল, যার প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাক খাতে। তবুও তারা অর্থবছরের শেষের দিকে ভালো প্রবৃদ্ধির আশা করছেন।

২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ৫ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ কোটি ডলারের রপ্তানি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শেষ দুই মাসে রপ্তানি করতে হবে ১ হাজার ৭২৯ কোটি ডলার, যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ২৬৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। নিট ও ওভেন—উভয় ধরনের পোশাকে ছিল প্রায় সমান প্রবৃদ্ধি। এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৪৪ শতাংশ।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯৩ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। শুধু এপ্রিল মাসেই চামড়া পণ্যের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ, আয় ৮ কোটি ডলার।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানিতেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৮৬ কোটি ডলারের পণ্য। তবে এপ্রিল মাসে এই রপ্তানি ছিল ৫ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম।

পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ছিল ৬৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৬.৮৯ শতাংশ কম। হোম টেক্সটাইল খাত থেকে আয় হয়েছে ৭৪ কোটি ডলার—প্রবৃদ্ধি ৪.২৫ শতাংশ হলেও এপ্রিল মাসে এই খাতে রপ্তানি ২.৬৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং আয় হয়েছে ৬ কোটি ডলার।

সার্বিকভাবে, রাজনৈতিক ও মৌসুমী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।