
অনলাইন ডেক্স:আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সংকটে পড়া ছয়টি ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নিরূপণে বিশেষ নিরীক্ষা শুরু করেছে দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং এবং কেপিএমজি। নিরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ব্যাংকগুলোকে একীভূত, অধিগ্রহণ, অবসায়ন করা হবে নাকি মূলধন জুগিয়ে ও ঋণ আদায় জোরদার করে পুনর্গঠন করা হবে।
এই বিশেষ নিরীক্ষা আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন করছে বহুপক্ষীয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
নিরীক্ষার আওতায় রয়েছে ছয়টি ব্যাংক:
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- এক্সিম ব্যাংক
- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
- আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ইতোমধ্যে এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিটি ব্যাংকের নিরীক্ষা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একজন করে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও একজন করে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকবেন। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে।
দুটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে এসে কার্যক্রমে যোগ দেবেন । আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ।কেপিএমজি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র মতে, এই ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে চারটির মালিকানা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এস আলমের হাতে। তার মালিকানাধীন গোষ্ঠী ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নামে-বেনামে বের করে নেয়, যা এখনও ফেরত আসেনি।
গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে।
এই বিশেষ নিরীক্ষা শেষ হলে ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হবে। নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত সম্পদ, ঋণ আদায়ের সক্ষমতা এবং অবস্থা মূল্যায়ন করা হবে, যা ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন বা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ছয়টি সংকটাপন্ন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার সঠিক মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছে। ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সের উদ্দেশ্য হলো ঋণদানে শৃঙ্খলা বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানের নিশ্চয়তা, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক অংশগ্রহণ এবং বহুমুখী অংশীদারদের উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে, সম্পদের গুণগত মান পর্যালোচনার (একিউআর) জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পর্যালোচনার আওতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সম্পদ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পরামর্শদাতারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিনিয়র ব্যবস্থাপনা কমিটি, নিরীক্ষক এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করবেন।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, “ব্যাংকগুলোর ক্ষতি সঠিকভাবে নিরূপণ করতে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা অত্যন্ত সময়োপযোগী। স্থানীয় নিরীক্ষকদের মাধ্যমে কাজটি করলে তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারত। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না। এতে অনিয়মের প্রকৃত সুবিধাভোগী এবং দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই প্রতিবেদন দেশ-বিদেশে আইনি কার্যক্রমেও ব্যবহৃত হতে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই নিরীক্ষার মাধ্যমে শুধু সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে না, বরং অনেক সমালোচকের মুখ বন্ধ করা যাবে।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনতে চায় এবং সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র উদঘাটনের পাশাপাশি সংস্কারের সঠিক পথ নির্ধারণ করতে চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সংকটাপন্ন ছয়টি ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান পর্যালোচনার (একিউআর) প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে।