
প্রতিবেদক: গত বছরের শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের আর্থিক চিত্র প্রকাশ করেছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন। তথ্য অনুযায়ী, জনতা ব্যাংক রেকর্ড ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যা দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, অগ্রণী ব্যাংকও ৯৮২ কোটি টাকার লোকসান দেখিয়েছে।
জনতা ব্যাংকের এমন ক্ষতির মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে সরকারি ও রাজনৈতিক সংযোগযুক্ত ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদী খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের শীর্ষ পাঁচ খেলাপি গ্রাহকের কাছে আটকে আছে মোট ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ২৩ হাজার কোটি, এস আলম গ্রুপের ১০ হাজার ২০০ কোটি এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অপরদিকে সোনালী ব্যাংক হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর আর্থিক পুনর্গঠন করে সফলভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে ৩৭১ কোটি টাকা থেকে ২০২৪ সালে মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮৮ কোটি টাকায়। ব্যাংকটি সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ও ট্রেজারি খাতে সঠিক বিনিয়োগ ও আদায়ের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছে।
রূপালী ব্যাংকের মুনাফা কমে ১১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের জন্য ঋণখেলাপি পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকটির প্রকৃত পরিস্থিতি কিছুটা লুকানো হয়েছে।
বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ছাড়াও এই চারটি ব্যাংক দেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে অবস্থান করছে। ব্যাংকগুলোর সংকটের অন্যতম কারণ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে রাজনৈতিক ও অনিয়ম-দুর্নীতিপূর্ণ ঋণ বিতরণ। ফলে সরকারের করদাতাদের টাকা দিয়ে এসময়ে মূলধন জোগান দিতে হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক এমডি শওকত আলী খান বলেন, “ঋণ ও ট্রেজারি খাত থেকে আয় ভালো হয়েছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে যথাযথ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার পরও আমরা মুনাফা এক হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, “গত ১৫ বছরে নিয়মের বাইরে ঋণ বিতরণ ও নিরাপত্তা ছাড়ের কারণে লোকসান হয়েছে। প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে ধীরে ধীরে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের একীভূতকরণের সম্ভাবনা নিয়ে সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক আলোচনা করছে, যাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত করা যায়।