
প্রতিবেদক: জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে উৎসে কর আরও এক দফা কমিয়েছে সরকার। তবে তারপরও ঢাকা মহানগরে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধনে মোট ব্যয় এখন হবে সাড়ে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ, ১ কোটি টাকার সম্পত্তি নিবন্ধনে ব্যয় হবে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এত দিন এই ব্যয় ছিল প্রায় ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে উৎসে কর প্রথম দফায় কমানো হয়। তখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে উৎসে কর ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ, অন্য শহরগুলোতে ৬ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং পৌর এলাকায় ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা হয়। তবে বাজেট অনুমোদনের সময় এসব হার আরও কমিয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে, এবারের চূড়ান্ত বাজেটে ফ্ল্যাট ও ভবন কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুযোগ অব্যাহত রাখার কথা বলা হলেও, তা থেকে সরে এসেছে সরকার।
জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় উৎসে কর ছাড়াও নিবন্ধনের আরও কয়েকটি ব্যয় রয়েছে—যেমন, স্ট্যাম্প শুল্ক দেড় শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ফি ৩ শতাংশ এবং ভ্যাট ২ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ পর্যন্ত। ১,৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাটে ভ্যাট ২ শতাংশ এবং এর বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটে ভ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। জমি বা প্লটের ক্ষেত্রে ভ্যাট ২ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৩ সালে সিটি করপোরেশন এলাকার জমিগুলোকে ক, খ, গ, ঘ এবং ঙ এই পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। ‘ক’ শ্রেণিতে রাজউক, সিডিএ, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের বাণিজ্যিক এলাকা, ‘খ’ শ্রেণিতে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক এলাকা, ‘গ’ শ্রেণিতে বেসরকারি আবাসন কোম্পানির বাণিজ্যিক এলাকা এবং ‘ঘ’ শ্রেণিতে সেসব কোম্পানির আবাসিক এলাকা রয়েছে। ‘ঙ’ শ্রেণিতে বাকি সব জমি অন্তর্ভুক্ত।
ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার আওতাধীন মৌজাগুলোর সব শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে এত দিন ৮ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো, যা এখন কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। একই হারে কর কমেছে ধানমন্ডি, রমনা, পল্টন, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানা এলাকার জমিতেও। ঢাকার অন্যান্য মৌজায়ও উৎসে করের হার কমানো হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতেও উৎসে কর কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি নিবন্ধনে ৬ শতাংশের বদলে ৩ শতাংশ এবং পৌরসভা পর্যায়ে ৪ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
এনবিআরের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ক থেকে ঘ শ্রেণির জমিতে ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিক স্পেস কিনলে দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ৫ শতাংশ বা প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা—যেটি বেশি হয়, সে অনুযায়ী কর দিতে হবে। ঙ শ্রেণিতে এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ শতাংশ বা প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, নিবন্ধন ব্যয় ৩ শতাংশ কমানোয় কিছুটা হলেও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের হার বাড়বে। তবে তিনি মনে করেন, নিবন্ধন ব্যয় আরও কমিয়ে ৭–৮ শতাংশে নামিয়ে আনলে অধিকাংশ ফ্ল্যাট ক্রেতা তাঁদের সম্পদ নিবন্ধন করতে আগ্রহী হবেন, এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।