
প্রতিবেদক: আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে ফ্ল্যাট কেনা ও ভবন নির্মাণে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আর থাকছে না বলে জানা গেছে। পাশাপাশি সোনার আংটি কেনা ও চোখে কর্নিয়া স্থাপনের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ করও বাতিল করা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হবে। এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট, নির্দিষ্টকরণ অধ্যাদেশ এবং অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। এগুলোর মধ্যে দুটি প্রস্তাবের আইনি পরীক্ষা (ভেটিং) ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু অর্থ অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়টি সভায় অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে এবং সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এবার সংসদ না থাকায় বাজেট নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়নি। বাজেট পেশের পরদিন অর্থ উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিলেও অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যান। অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে মতামত আহ্বান জানানো হলেও ১০০টির মতো মতামতও জমা পড়েনি। বেশির ভাগ মতামতেই বাজেটের ব্যাখ্যা না বোঝার কথা বলা হয়েছে। আজ বা কাল এর ব্যাখ্যা অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হতে পারে।
এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী চেম্বার ও সংগঠন বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে এবং কেউ কেউ অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটও আজ উপদেষ্টা পরিষদে পাস হবে। মূল বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয় অনুমোদনের জন্য এই সম্পূরক বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) অধ্যাদেশ–২০২৫’ উপস্থাপন করবেন। সংসদ থাকলে যেটি কণ্ঠভোটে পাস হতো, এখন তা উপদেষ্টাদের সম্মতিক্রমে অনুমোদিত হবে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর সিংহভাগ অর্থ—১ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা—দাবি করেছে অর্থ বিভাগ। বাকি ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কেউ বরাদ্দ কমিয়েছে, কেউ অপরিবর্তিত রেখেছে।
অর্থ বিভাগের দাবি এত বেশি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এটি মোট (গ্রস) অর্থের হিসাব, যার মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ, ভর্তুকি ও প্রণোদনা, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দায় ইত্যাদি। এ কারণেই দাবি অনেক বেশি দেখাচ্ছে।
সংসদ থাকলে সম্পূরক বাজেট পাসের আগে মঞ্জুরি দাবির ওপর বিরোধী দলসহ সংসদ সদস্যদের আলোচনার সুযোগ থাকত। এবার সেই আলোচনা হয়নি, যা দেশের বাজেট প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক অভাবকেই নির্দেশ করে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে বড় পরিবর্তন না এলেও কিছু সংবেদনশীল বিষয়ে সংশোধন আসতে যাচ্ছে—যেমন কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ বাতিল ও নির্দিষ্ট কর প্রত্যাহার। একইসঙ্গে সংসদবিহীন বাজেট প্রক্রিয়া প্রশ্ন তুলেছে আলোচনার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা নিয়েও।