জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে

প্রতিবেদক: বদলির আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। মঙ্গলবার প্রথমে আটজন এবং পরে ছয়জন—মোট ১৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথকভাবে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা। তাঁরা মে ও জুন মাসে এনবিআর ভাগ করার বিরুদ্ধে চলা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্যান্য বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারাও আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

আইআরডির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশকে অবজ্ঞা করে তা প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী তাদের ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তারা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

বরখাস্ত হওয়া ১৪ কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জন আয়কর বিভাগে এবং ৫ জন শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে কর্মরত ছিলেন। পদমর্যাদায় তিনজন অতিরিক্ত কমিশনার, পাঁচজন যুগ্ম কমিশনার, চারজন উপকর কমিশনার ও দু’জন রাজস্ব কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁরা এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন কর অঞ্চল ও ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মরত ছিলেন।

উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ভ্যাট গোয়েন্দা), সিফাত-ই-মরিয়ম (উপপ্রকল্প পরিচালক, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো), মির্জা আশিক রানা (অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর অঞ্চল-৮)। এছাড়া যুগ্ম কমিশনারদের মধ্যে রয়েছেন—মাসুমা খাতুন, মুরাদ আহমদ, মোরশেদ উদ্দিন, মোনালিসা শাহরীন ও আশরাফুল আলম। উপকর কমিশনারদের মধ্যে রয়েছেন—শিহাবুল ইসলাম, নুশরাত জাহান শমী, ইমাম তৌহিদ ও মো. শাহাদাত জামিল। রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন—সবুজ মিয়া ও শফিউল বশর।

গত ২৪ জুন এনবিআর ভবনের নিচে আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলেন। তাঁরা এ আদেশকে ‘প্রতিহিংসামূলক ও নিপীড়নমূলক’ বলে দাবি করেন। এই ঘটনার জের ধরেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর আগেও তিনজন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে।

উল্লেখ্য, ১২ মে এনবিআরকে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘বাস্তবায়ন’ নামে দুটি ভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে কলমবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ও সর্বশেষ ২৮-২৯ জুন কমপ্লিট শাটডাউন পালন করা হয়। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত হয়।

আন্দোলনের পর প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের কাছে আবেদন করেন। চেয়ারম্যান তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “আমি ক্ষমা করেছি, কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে, সেটা রাষ্ট্র ক্ষমা করবে কিনা, সেটা আমি বলতে পারি না।”

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চেয়ারম্যান ক্ষমা করলেও সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এনবিআরের কিছু করার থাকে না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে হয়তো এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”