জীবন বীমায় প্রিমিয়াম না দেওয়ায় ১২ লাখ পলিসি তামাদি, গ্রাহকের ৪ হাজার কোটি টাকা আটকে

প্রতিবেদক: দেশে বর্তমানে ৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এসব কোম্পানির অধীনে মোট ৭০ লাখ ৮৬ হাজার বীমা পলিসি রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, এর মধ্যে অন্তত ১২ লাখ ৫০ হাজার পলিসি এখন আর কার্যকর নয়—অর্থাৎ তামাদি বা বাতিল হয়ে গেছে। মূলত সময়মতো প্রিমিয়াম না দেওয়ার কারণে এসব পলিসি বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলো।

পলিসি তামাদি হওয়ার ফলে বীমাকারীর মৃত্যুর পর পরিবার আর্থিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাতিল হওয়া এসব পলিসির বিপরীতে গ্রাহকদের দাবি ছিল প্রায় ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা, কিন্তু পরিশোধ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। ফলে প্রায় ৪ হাজার ৩৫ কোটি টাকা গ্রাহকের প্রাপ্য থাকলেও তা আটকে রয়েছে বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে। হিসাব অনুযায়ী, বাতিল পলিসির হার মোট পলিসির ১৭.৬৪ শতাংশ।

তমাদি পলিসির সংখ্যার দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির ২ লাখ ৮৫ হাজার ৩১১টি পলিসির মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৮টি তামাদি, যা মোট পলিসির ৮৩.৩৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৭টি পলিসির মধ্যে তামাদি হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৮টি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স, যেখানে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৬টি পলিসির মধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৯টি বাতিল হয়েছে। ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সেও একই চিত্র—১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯৫টি পলিসির মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৪৫টি তামাদি হয়েছে।

এই পরিস্থিতি জীবন বীমা খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রিমিয়াম প্রদানে সচেতনতা বাড়ানো এবং পলিসি রক্ষণাবেক্ষণে কোম্পানিগুলোর আরও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।