
প্রতিবেদক: দুই বছরের স্থবিরতার পর সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দেশে সামগ্রিক আমদানি কিছুটা বাড়লেও টানা তৃতীয় বছরের মতো কমেছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এ খাতে আমদানি ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে। এটি বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের আস্থাহীনতা এবং শিল্প খাতে চাহিদা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে মন্দার লক্ষণ।তিনি মনে করেন, সরকারি নীতিতে অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি এ অবস্থার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সবচেয়ে বেশি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে চামড়া শিল্প খাতে, এরপর রয়েছে প্যাকিং, টেক্সটাইল এবং পাটখাত। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম—গত অর্থবছরের মে মাসে তা ছিল মাত্র ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, যেখানে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল সাড়ে ৯ শতাংশ।
বিল্ড-এর সাবেক চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম মনে করেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ার ফলে এলসি খোলার হার কমেছে। “খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়েই বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে,” বলেন তিনি। এর পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়ন আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের এমডি মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, এলসি খোলার প্রবণতা কমে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগ থমকে গেছে। তিনি এ অবস্থা তৈরির জন্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেন: নীতিগত অনিশ্চয়তা, ইউটিলিটি সেবার ঘাটতি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা।
পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী মনে করেন, উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুদের হার কমার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর মতে, রপ্তানি না বাড়ালে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও বাড়বে না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “সাধারণত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়লে তা ভালো অর্থনীতির বার্তা দেয়। কিন্তু এখন যা ঘটছে, তা শিল্প খাতে স্থবিরতার ইঙ্গিত দেয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “নিম্ন প্রবৃদ্ধি, কম বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ধীরগতিই এর প্রধান কারণ।”
সার্বিকভাবে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এই পতন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশে আস্থার সংকট ও অর্থনৈতিক গতি হ্রাসের প্রতিফলন।