টানা দরপতনে শেয়ারবাজার, এক সপ্তাহে সূচক হারালো ১০৯ পয়েন্ট

প্রতিবেদক: টানা দরপতনের মধ্য দিয়ে আরও একটি দুর্বল সপ্তাহ পার করলো দেশের শেয়ারবাজার। চলতি সপ্তাহের চারটি কর্মদিবসেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর সূচক ডিএসইএক্স কমেছে। পুরো সপ্তাহে সূচকটি হারিয়েছে ১০৯ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ। এ সময়ে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৬৭টির শেয়ারের দাম কমেছে। মিউচুয়াল ফান্ডেও পতনের ছাপ পড়েছে—৩৭টির মধ্যে ৩২টির দর কমেছে।

এর আগেও চলতি বছর একাধিকবার সূচকের ধারাবাহিক পতন দেখা গেছে। যেমন—১২ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং পরে ২২ থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সূচক হারিয়েছিল যথাক্রমে ৯০ ও ৭৪ পয়েন্ট। তবে এবারের মতো টানা চার দিনের পতন তুলনামূলকভাবে উল্লেখযোগ্য।

শেয়ারবাজারে এ দরপতনের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বিভিন্ন মত দিচ্ছেন। কিছু শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ইস্যুতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও এখন তার প্রভাব নেই। বরং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সাম্প্রতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্কের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ায় সেই কারণে বাজার পতন এখন আর যৌক্তিক নয়। বরং এখন বাজারে নতুন করে আকৃষ্ট হবার মতো কোনো ইতিবাচক খবর নেই। এতে বিনিয়োগের গতি কমেছে, বিক্রির চাপ বেড়েছে, এবং একবার পতন শুরু হলে অনেকে ভয়েও শেয়ার বিক্রি করছেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব খাতেই দরপতন হয়েছে। ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৬৭টির দর কমেছে, যার মধ্যে ১১৪টির দর কমেছে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ। বিপরীতে মাত্র ৭৩ কোম্পানির দর বেড়েছে, যার মধ্যে ১৪টির দর ৫ থেকে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে বস্ত্র এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে। বস্ত্র খাতের ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ৫১টির দর কমেছে এবং গড় দরপতন ৩.৬৪ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ২৩ কোম্পানির মধ্যে ১৭টির দর কমেছে, গড় দরপতন ৩ শতাংশের বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি, সেবা ও নির্মাণ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতেও উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে।

পতনের পাশাপাশি টাকার অঙ্কেও লেনদেন কমেছে। বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে, ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩৩৯ কোটি টাকার—যা ২৭ মার্চের পর সর্বনিম্ন।

তবে এই দরপতনের মাঝেও ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করেছে এসিআই লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ দৌলা ব্লক মার্কেট থেকে আরও ১৪ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন, যার বাজারমূল্য ২৭ কোটি টাকারও বেশি। এর আগেও তিনি দুই দফায় মোট ৩১ লাখ শেয়ার কিনেছেন। একইভাবে কোম্পানির পরিচালক সুস্মিতা আনিসও সম্প্রতি প্রায় ১৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে জানুয়ারিতে তিনি এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলাও বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন।