ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্ক ঘোষণা, সময়সীমা বাড়িয়ে ১ আগস্ট

প্রতিবেদক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এসব শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রথমে ১৪টি ও পরে আরও সাতটি দেশকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছেন—এই সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে না এলে নতুন হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।

এই ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়। তবে এই দফায় কোনো দেশই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি—যা আগে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা কানাডা করেছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন আর্থিক খাত বা ওয়াল স্ট্রিটেও এবার তেমন কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং বাজার পরিস্থিতি বেশ স্থিতিশীল ছিল। সূচক পতনের পর তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচক বেড়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও চাঙাভাব ফিরে এসেছে।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তিন মাস আগে ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন। এখন সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে আবারও তা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে বাজারের একটি অংশ মনে করছে, ট্রাম্পের হুমকি হয়তো বাস্তবে পুরোপুরি কার্যকর হবে না।

অস্ট্রেলিয়ার বাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর মতে, ট্রাম্পের নতুন ঘোষণাকে ‘ভূমিকম্পের পর আফটারশক’-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যার জন্য বাজার আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল। ফলে এবার আগের মতো বড় ধাক্কা লাগেনি।

এদিকে যেসব দেশ চিঠি পেয়েছে, তারা সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে জাপান হতাশ। তবে তিনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে আগ্রহী। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের ভাষ্য অনুযায়ী, পুরো প্রক্রিয়াটি এক ধরনের বিশৃঙ্খল নাটক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন, থাইল্যান্ডের রাজাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যিনি নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন নন। এ থেকেই বোঝা যায়, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি কতটা অগোছালো ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তনির্ভর। যদিও এই পরিস্থিতি কিছু ইতিবাচক বার্তাও দিয়েছে—বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এখন একই পথে হাঁটার আগে দ্বিধায় পড়ছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রাম্পের শুল্কনীতি অনুসরণ করে কোনো দেশই বাস্তবে লাভবান হয়নি। বরং অনেকটা ব্রেক্সিটের মতোই এর নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলো যেমন ব্রিটেনের পথ অনুসরণ না করে উল্টো ইইউর প্রতি সমর্থন জোরদার করেছে, তেমনি ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এখন এই নীতির ক্ষতিকর দিক সামাল দিতে ব্যস্ত।

চীন বরাবরই বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিক থেকে পিছু হটছে, তখন চীন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন করে বিশ্ববাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে উদ্যোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বিশ্ব বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা কেউ ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে অনুসরণ করেনি।

তবে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস মনে করে, এখনও বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী সমন্বিত বাণিজ্যনীতি তৈরি হয়নি। একইভাবে বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থায়ও বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অনিশ্চয়তা দীর্ঘস্থায়ী হলে এই পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে মুক্তবাণিজ্যের ধারা শুরু করেছিল, ট্রাম্প সেটি থেকে পুরোপুরি সরে গেছেন। সৌভাগ্যবশত, বিশ্বের অন্য দেশগুলো এখনো সেই বিপথে হাঁটেনি। তবে ট্রাম্প যতই হুমকি দিন না কেন, এই শুল্ক যুদ্ধের বাস্তবতা প্রতিদিন প্রমাণ করে দিচ্ছে—শুল্ক আরোপ করে কোনো দেশই শেষ পর্যন্ত লাভবান হয় না।