
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। কয়েক মাসের অস্বস্তিকর যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়ে তিনি জানান, চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের জবাবে এবার যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে শুল্ক ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে। পাশাপাশি সফটওয়্যার রপ্তানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। এসব পদক্ষেপ কার্যকর হবে আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে। বিদ্যমান শুল্কবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ৯ দিন আগে এই ঘোষণা এলো।
ট্রাম্প আরও জানান, তিন সপ্তাহ পর দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি এখন অনিশ্চিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, “এখন মনে হচ্ছে, সেই বৈঠকের আর মানে নেই।” যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এখনো বৈঠক বাতিল করা হয়নি।
চীন সম্প্রতি বিরল ধাতুর রপ্তানিতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম এই খনিজ সরবরাহকারী দেশের এমন পদক্ষেপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য প্রযুক্তি শিল্পে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র সফটওয়্যার রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে চীনের এআই ও ক্লাউড কম্পিউটিং খাত বড় ধাক্কা খাবে। ট্রাম্প বিমান ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
চীন দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করে আসছে। তাদের মতে, এসব পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে। নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির সম্পর্কে ছয় মাস পর আবার বড় ধরনের ফাটল দেখা দিল। এতে প্রশ্ন উঠেছে—ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে গড়ে ওঠা শ্লথ অর্থনৈতিক সমঝোতা আদৌ টিকে থাকবে কি না।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ শতাংশের বেশি কমে যায়—এপ্রিলের পর যা সবচেয়ে বড় ধস। বিনিয়োগকারীরা সোনা ও মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে ঝুঁকলায় ডলারের মান অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে কমে যায়। প্রযুক্তিখাতের শেয়ারের দরও পড়ে গেছে।
চীন বর্তমানে বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি প্রক্রিয়াজাত বিরল ধাতু ও চুম্বক উৎপাদন করে। এসব খনিজ বৈদ্যুতিক গাড়ি, বিমানের ইঞ্জিন, সামরিক রাডার ও নানা প্রযুক্তিপণ্যে ব্যবহৃত হয়। বিশ্লেষক ক্রেইগ সিঙ্গেলটনের মতে, ট্রাম্পের ঘোষণায় কার্যত শুল্কবিরতির অবসান ঘটছে। ওয়াশিংটন মনে করছে, চীন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় নেমেছে।
ট্রাম্প দাবি করেন, চীন বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, তারা বিরল ধাতুর উৎপাদনসংক্রান্ত প্রায় সব উপাদানে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। তাঁর ভাষায়, “বেশ কয়েকটি দেশ আমাকে জানিয়েছে, তারা চীনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ।”
চীনের পদক্ষেপকে ‘শত্রুভাবাপন্ন নির্দেশ’ বলে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “তাদের পদক্ষেপের জবাবে আমাদের আর্থিকভাবে প্রতিরোধ গড়তে হচ্ছে। যে উপাদানে তারা একচেটিয়া দখল তৈরি করতে চায়, আমাদের কাছে তার দ্বিগুণ বিকল্প আছে।” তবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস, মার্কিন ট্রেজারি ও বাণিজ্য প্রতিনিধির কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগেই ট্রাম্প প্রশাসন চীনা বিমান সংস্থাগুলোর ওপর নতুন বিধিনিষেধের প্রস্তাব দেয়, যাতে তারা রাশিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে আসা–যাওয়া করতে না পারে। একই দিনে মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন জানিয়েছে, অনলাইন বিক্রেতারা নিষিদ্ধ চীনা পণ্য সরাতে শুরু করেছে।
চীনও বৃহস্পতিবার পাঁচটি নতুন ধাতু ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে রপ্তানিনিষেধ তালিকায় যুক্ত করেছে। এমনকি বিদেশি প্রতিষ্ঠান যারা চীনের কাঁচামাল ব্যবহার করবে, তাদেরও নতুন নিয়ম মানতে হবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অক্টোবরের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় হতে যাওয়া অ্যাপেক সম্মেলনের আগেই পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। চীন-মার্কিন সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক স্কট কেনেডির মতে, উভয় পক্ষই ভাবছে চাপ বাড়ালে অপর পক্ষ ছাড় দেবে। তাই সম্ভাব্য পরবর্তী সংঘাতের জন্য আগেভাগেই অবস্থান শক্ত করা হচ্ছে।