
অনলাইন ডেক্স: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার নতুন এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে কানাডার অ্যালুমিনিয়াম ও ধাতব পণ্যের ওপর দ্বিগুণ করা শুল্ক পরে প্রত্যাহার করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মূলত মার্কিন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন শিল্পকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এতে ভোক্তা ও শিল্পপণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এই শুল্ক আরোপের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যও শুল্কের আওতায় এসেছে, যা ট্রাম্প ২.০ জমানায় প্রথমবারের মতো ঘটল। শুল্ক ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইইউ এবং কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের জবাবে আরও বাড়তি শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কবে বা কী পরিমাণে এই শুল্ক আরোপ করা হবে, তবে বলেছেন, “অবশ্যই—আমি এর জবাব দেব।”
ট্রাম্প এর আগে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি একযোগে সব দেশের ওপর এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
২০১৮ সালে ট্রাম্প ইস্পাতে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য ইস্পাতভিত্তিক পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। যদিও উৎপাদন সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছিল—২০২১ সালে ইস্পাত শিল্পের সম্মিলিত উৎপাদন বেড়েছিল মাত্র ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার।
যেসব শিল্পকে ট্রাম্প এই শুল্কের মাধ্যমে রক্ষা করতে চান, সেগুলোতে উল্টো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক লাখ কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে, যার মধ্যে শুধুমাত্র অ্যালুমিনিয়াম শিল্পেই ২০ হাজার মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালকোয়া-র প্রধান নির্বাহী উইলিয়াম ওপলিঞ্জার গত মাসেই এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, কানাডা মার্কিন দুগ্ধপণ্যের ওপর ২৫০ থেকে ৩৯০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে, যা মার্কিন কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেছেন, “বহু বছর ধরে চলে আসা এই অন্যায় আর সহ্য করা হবে না।”
এছাড়া, ট্রাম্প দাবি করেছেন, বিভিন্ন খাতে মার্কিন পণ্যের ওপর কানাডা অবিশ্বাস্য হারে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ২ এপ্রিলের মধ্যে কানাডা যদি এসব শুল্ক না তুলে নেয়, তবে তাদের গাড়ির ওপর ‘উল্লেখযোগ্য’ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।
তবে ট্রাম্পের এই হুমকিতে নিজেদের অবস্থান বদলানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কানাডার প্রশাসন।
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সহায়তা করতে পারে, তবে বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা ইতোমধ্যেই পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে, যা বাণিজ্যযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাশাপাশি, এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কেমন হয়।