ট্রাম্পের শুল্কে বিপদে ভারত, সুযোগ খুঁজছে চীন–ভারত সহযোগিতা

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের চাপের মধ্যে চীন সফরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যের (হীরা, চিংড়ি ইত্যাদি) ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছে। রাশিয়া থেকে ভারত তেল আমদানি বন্ধ না করায় এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক ভারতের রপ্তানি খাতের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে এবং দেশটির প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যও হুমকির মুখে পড়তে পারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়তি চাপে চীনও অর্থনীতিতে গতি আনার পরিকল্পনায় বাধার মুখে পড়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের দ্বিতীয় ও পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি—চীন ও ভারত—সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুঁজতে পারে। তবে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ দুই দেশের পারস্পরিক অবিশ্বাসকে এখনও ঘনীভূত করে রেখেছে।
২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষ ছিল গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্ত। এর পরিণতিতে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ, ভিসা সীমাবদ্ধতা, বিনিয়োগ আটকে যাওয়া এবং টিকটকসহ দুই শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেয় ভারত।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সেবা খাত, চীনের উৎপাদন দক্ষতা এবং রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ একসঙ্গে কাজে লাগালে নতুন রপ্তানি বাজার তৈরি হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপথে পরিবর্তন আসতে পারে।
ইতিমধ্যেই ভারত–চীন সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালুর ঘোষণা এসেছে। ভিসা নীতিতে শিথিলতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস উৎপাদনে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্বের সুযোগ আছে।

মোদির এবারের সফর সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বৈঠককে ঘিরে। এই সংগঠন পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, এসসিও এখনো বড় কোনো ফল দিতে পারেনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন ভারতের কাছে এই আঞ্চলিক জোটের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে চীনও ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কচাপের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের ঐক্য প্রদর্শন করতে চাইবে।

চীন–ভারতের সম্পর্ক এত জটিল যে একটি বৈঠকে বড় পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিব্বত, দালাই লামা, যৌথ নদী, সীমান্ত বিরোধ কিংবা পাকিস্তান ইস্যু এখনো সম্পর্কের অন্তরায়। তবু বিশ্লেষকদের মতে, মোদির এ সফরে অন্তত কিছু তিক্ততা কমতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে—ভারতের হাতে বিকল্প আছে।