
প্রতিবেদক: ট্রাম্প প্রশাসনের রেমিট্যান্স কর পরিকল্পনা বাংলাদেশসহ অন্যান্য রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশের জন্য নতুন এক অর্থনৈতিক হুমকি তৈরি করেছে। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হাউস বাজেট কমিটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। প্রস্তাবিত এই বিলটি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশির জন্য দেশে অর্থ পাঠানোকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে।
এই বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের ওপর পাঁচ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। এই করের আওতায় এইচ-ওয়ানবি ও অন্যান্য অস্থায়ী অভিবাসন ভিসা এবং এমনকি গ্রিন কার্ডধারীরাও পড়বেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় ১৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই ছিল বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স উৎস।
কর্টল্যান্ডের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিরূপাক্ষ পাল এই পরিস্থিতিকে ‘বাংলাদেশের জন্য গভীর উদ্বেগের’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এটি ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহে একটি বিশাল আঘাত হানবে।” তাঁর মতে, যেহেতু প্রবাসীরা তাদের আয় থেকে কর পরিশোধ করার পর রেমিট্যান্স পাঠান, সেই অর্থের ওপর আবার কর আরোপ করা অন্যায্য।
বিরূপাক্ষ আরও বলেন, ওয়াশিংটনের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিলটি পাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, কংগ্রেসের বেশিরভাগ সদস্যই চতুর্থ বা পঞ্চম প্রজন্মের অভিবাসী, যারা আর রেমিট্যান্স পাঠান না। তদুপরি, এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের জোরালো কণ্ঠস্বরও অনুপস্থিত।
এই বিল বাস্তবায়িত হলে ভারত, মেক্সিকোসহ ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশও এর তীব্র প্রভাবের মুখে পড়বে, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপক পরিমাণে রেমিট্যান্স পায়। বিশেষ করে ছোট অংকের রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তিরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ বিলটিতে ন্যূনতম স্থানান্তরের জন্য কোনো ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পায়, তাহলে পাঁচ শতাংশ করের মানে ৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি।” তিনি আরও যোগ করেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস, তাই এর প্রভাব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য মারাত্মক হতে পারে।”
র্যাপিডের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, এই প্রস্তাবিত কর অনেককে হুন্ডির মতো অবৈধ অর্থ প্রেরণের পথে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে হার তুলনামূলক বেশি। তিনি বলেন, “বিদেশি নীতিগত চ্যালেঞ্জ হলেও এর দেশীয় প্রভাব গভীর হবে। বিশেষ করে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বৃহত্তম রেমিট্যান্স-প্রদানকারী দেশ, তাই বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
রাজ্জাক মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বৈশ্বিকভাবে সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া জরুরি। “এটি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত সব দেশের একসঙ্গে আওয়াজ তোলা দরকার। কারণ এটি বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ সহজ করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে, বলেন তিনি।
বিকল্প নীতির প্রসঙ্গে বিরূপাক্ষ পাল বলেন, রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনার পরিবর্তে প্রবাসীদের জন্য আরও সুবিধাজনক বিনিময় হার নির্ধারণ করা উচিত। “নগদ প্রণোদনার চেয়ে ভালো বিনিময় হার প্রবাসীদের আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে পারে,তিনি বলেন।