
প্রতিবেদক: ট্রাম্প প্রশাসন আমদানি করা ওষুধে ব্যাপক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিবেদনের সূত্রে এনডিটিভি জানিয়েছে, কিছু ওষুধে এই শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাড়ি ও ইস্পাত পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন, এবার লক্ষ্য হয়েছে ওষুধশিল্প। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অনেক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করেছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, শুল্ক কার্যকর হলে বাজারে ওষুধের দাম বেড়ে যাবে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।
হোয়াইট হাউস ১৯৬২ সালের ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্টের ২৩২ ধারার আলোকে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি তুলে ধরে এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়েছে। যুক্তি হলো কোভিড–১৯ মহামারির অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। ইতিমধ্যেই কিছু কোম্পানি আমদানি বাড়িয়েছে ও মজুত করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি শুল্ক ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ কার্যকর হয়, প্রকৃত প্রভাব বোঝা যাবে ২০২৭ বা ২০২৮ সালে।
ভোক্তাদের ওপর প্রভাবও মারাত্মক হতে পারে। আইএনজির গবেষণা অনুযায়ী, মাত্র ২৫ শতাংশ শুল্কই যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম ১০–১৪ শতাংশ বাড়াতে পারে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবার ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনের ৯২ শতাংশ জেনেরিক ওষুধ বিদেশে উৎপাদিত হয়, ফলে শুল্কের সঙ্গে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
বিশ্বের অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি চীন, ভারত, আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডে উৎপাদন স্থানান্তর করেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ও ফার্মা পণ্যের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের সক্রিয় উপাদান বিদেশে তৈরি হওয়ায় তাৎক্ষণিক সমাধান কঠিন।
কিছু বড় কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। রোশে ৫০ বিলিয়ন ডলার এবং জনসন অ্যান্ড জনসন ৫৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। তবে এসব বিনিয়োগ দ্রুত সরবরাহ সমস্যার সমাধান করবে এমন নয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, শুল্ক থেকে রক্ষা পেতে হলে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা প্রয়োজন।
শুল্ক বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। জেনেরিক ওষুধে ছাড় দেওয়া হতে পারে, শুল্ক সর্বোচ্চ হার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। এই কারণে বাজারে সরবরাহ কমানো বা দাম বাড়ানোও ঘটতে পারে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ সরবরাহকারী। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির প্রায় ৬ শতাংশ আসে এবং ট্রাম্প প্রশাসনও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা স্বীকার করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে এলডিসি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য শুল্কের কারণে দেশের ওষুধ রপ্তানিতে বিশেষ প্রভাব পড়বে না।
আইনি ও রাজনৈতিক বাধাও রয়েছে। ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অব আপিলস এই পদক্ষেপের কিছু অংশ খারিজ করেছে, এবং সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বিষয়টি যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট সামাজিক মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাই তাৎক্ষণিক সংকট নাও দেখা দিতে পারে। তবে শুল্ক বহাল থাকলে এবং সরবরাহ ব্যাহত হলে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।