ডলার ও বন্ডের সুদ বেড়ে চাপের মুখে ইয়েন, শুল্কনীতির প্রভাব স্পষ্ট মার্কিন বাজারে

প্রতিবেদক: বুধবার একসঙ্গে বেড়েছে মার্কিন ডলারের মান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের সুদের হার। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে জাপানি মুদ্রা ইয়েন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব ধীরে ধীরে মার্কিন বাজারে দৃশ্যমান হচ্ছে।

গত জুনে কফি, সাউন্ডসিস্টেম, আসবাবসহ নানা ধরনের আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের অনেকেই মনে করছেন, এ বছর ফেডারেল রিজার্ভ আর সুদহার কমাবে না। এর ফলেই ডলারের দাম ও বন্ডের সুদ উভয়ই বেড়েছে।

বাজারে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ইয়েনের ওপর। ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান রাতারাতি পড়ে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৯.০৩ ইয়েনে। এর আগের দিন এই হার ছিল ১৪৮.৯০ ইয়েন প্রতি ডলার। ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ডের অবস্থানও দুর্বল। গত মঙ্গলবার এই দুই মুদ্রার মান ছিল তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইউরো দাঁড়ায় ১.১৬০৮ ডলার এবং পাউন্ড ছিল ১.৩৩৯৪ ডলার।

ইভলিন পার্টনার্সের বিনিয়োগ কৌশলবিদ ন্যাথানিয়েল কেসি মন্তব্য করেন, শুল্কের কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বাড়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। যদিও তিনি এখনই চূড়ান্তভাবে কিছু বলতে রাজি নন, তবে ফেডারেল রিজার্ভের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হতে পারে বলে জানান।

বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ডিসেম্বর নাগাদ সুদের হার কমার সম্ভাবনা কমে ৪৩ বেসিস পয়েন্টে দাঁড়াবে, যা সপ্তাহের শুরুতে ছিল ৫০ পয়েন্টের ওপরে। আজ যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের সরকারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৪৯৫ শতাংশে, যা এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ে দুই বছরের বন্ডের সুদ ৩.৯৫ শতাংশের কিছু ওপরে ছিল।

এই পরিস্থিতিতে ডলার অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের সূচক উঠে এসেছে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ—৯৮.৬০-এর কাছাকাছি।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান ডলার মঙ্গলবার ০.৪৫ শতাংশ কমে গেলেও বুধবার সকালে সামান্য বেড়ে ০.৬৫১৭ ডলারে পৌঁছেছে। নিউজিল্যান্ডের ডলার বেড়েছে ০.১৭ শতাংশ।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা আরেকটি সম্ভাবনা নিয়েও ভাবছে—ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের জায়গায় নতুন কোনো ব্যক্তি আসতে পারেন যিনি সুদ কমানোর পক্ষে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেও পাওয়েলের সমালোচনা করেছেন। গতকাল তিনি ফেড সদর দপ্তরের সংস্কারকাজে ২৫০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত ব্যয়কে ‘ছাঁটাইয়ের মতো অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন।

র‍্যাবো ব্যাংকের বিশ্লেষক মলি শোয়ার্টজের মতে, ট্রাম্পের চাপ বাড়তে থাকলে পাওয়েলকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে মনোনয়নের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

এই দিন ট্রাম্প আরও ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এছাড়া ছোট দেশগুলোর জন্যও শিগগিরই নতুন শুল্ক হার জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে, যার হার হবে ‘১০ শতাংশের কিছু ওপরে’।