
প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকার ডিজিটাল বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। খসড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো অনলাইন পণ্য ও সেবা বিক্রিতে প্রতারণা, বিলম্ব এবং নিষিদ্ধ পণ্যের বাণিজ্য প্রতিরোধ করা। এতে বলা হয়েছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে অনলাইন বিক্রেতাকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহ না করলে মূল্যের কয়েক গুণ জরিমানা আরোপ করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২১-২২ সালে অনলাইনে টাকা দিয়ে পণ্য না পাওয়ায় হাজার হাজার গ্রাহক সমাবেশ, মিছিল ও রাস্তা অবরোধ করেছেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল বাণিজ্য’ বলতে যেকোনো ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য ও সেবা কেনাবেচা বোঝাবে। ‘ডিজিটাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান’ বলতে বোঝানো হবে অনলাইনে নিজস্ব নাম বা পরিচালনায় ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে পণ্য বিক্রি বা প্রদর্শন করা প্রতিষ্ঠান।
অধ্যাদেশ পাস হলে একটি ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এটি দেশের ডিজিটাল বাণিজ্য প্রসার, শৃঙ্খলা রক্ষা, বাণিজ্য-বিরোধ নিষ্পত্তি ও অপরাধ প্রতিরোধের তদারক করবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি, ওষুধপণ্যের অপ্রামাণিক তথ্য, অসত্য বিজ্ঞাপন বা প্রতারণামূলক কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তদারকি করবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া ডিজিটাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে না। ডিবিআইডি (ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিটি) নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। প্রতারণা বা বিধি লঙ্ঘন করলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে। এছাড়া বিদেশি অনুদান, প্রকল্প সহায়তা ও ঋণপ্রাপ্তিও সরকারি অনুমোদনের ভিত্তিতে সম্ভব হবে।
নিষিদ্ধ কার্যক্রম যেমন অনলাইন জুয়া, লটারি, যৌন উত্তেজক সামগ্রী, অনলাইন এসকর্ট সার্ভিস ইত্যাদি অধ্যাদেশের বাইরে রাখা হয়েছে। তবে ই-কমার্স খাতের বাজার সম্প্রসারণ, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অভিযোগ তদন্তের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া যাবে।
দেশে ই-কমার্স বা ডিজিটাল বাণিজ্য ১৯৯৯ সালে শুরু হলেও পেশাদারিকভাবে শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১৪ সালে খাতের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। ২০১৮ সালে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা পরে ২০২০ সালে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সংশোধন করা হয়।
অধ্যাদেশ পাস হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এতে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। কার্যক্রমে গতিশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে, যার নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য উপদেষ্টা বা প্রতিমন্ত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, “দেশে ডিজিটাল বাণিজ্য কেন্দ্রিক অনেক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ না থাকায় মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। একটি আইন ও কর্তৃপক্ষ থাকলে অনলাইন কেনাবেচার সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব হবে।