ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

প্রতিবেদক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) আজ সোমবার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নকশাবহির্ভূতভাবে পরিচালিত রেস্তোরাঁ ও রুফটপ রেস্তোরাঁগুলোর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
ডিএসসিসি জানায়, ঢাকা শহরের কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে, ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ চালানোর ফলে জনজীবনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অতীতে এসব রেস্তোরাঁতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে।

ডিএসসিসি আরও জানিয়েছে, এসব রেস্তোরাঁ ও রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার ফলে যদি কেউ অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে, সেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের নকশা যদি অনুমোদিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তথ্য-উপাত্ত প্রদান করেন, সেক্ষেত্রে সেগুলো সচল করার সুযোগ রয়েছে।

ডিএসসিসির এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনো আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত সমস্যাযুক্ত।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁগুলোর জন্য রাজউকের পাস করা ভবনে নকশায় সাধারণত রেস্তোরাঁর অনুমোদন থাকে না। বিগত সরকারের সময়ে এই সমস্যা সমাধানে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু সরকারের পরিবর্তনের কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
ইমরান হাসান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হলে ব্যবসায়ীরা নতুন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন, এবং সেক্ষেত্রে রেস্তোরাঁ বন্ধ করার বিকল্প থাকবে না।

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি, বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে একটি ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। এই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, কিন্তু এসব রেস্তোরাঁর কোনো অনুমোদন ছিল না।
এর পর থেকে রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন সরকারী সংস্থা, যেমন রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), এবং ফায়ার সার্ভিস রেস্তোরাঁগুলোর ওপর অভিযান চালিয়ে আসছে। মাঝে মাঝে এসব অভিযানগুলোর মধ্যে রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা, সিলগালা করা, কর্মীদের গ্রেপ্তার করা এবং জরিমানা আরোপের ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ৪ বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪,৩৬,২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ৫৮% বেশি। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত রেস্তোরাঁর সংখ্যা মাত্র ৮৫২টি, বাকি সব বেসরকারি।
রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে সরকারী সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নেওয়া লাগে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় সরকারী অনুমোদন নিয়ে মাত্র ১৩৪টি রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে।

নগর-পরিকল্পনাবিদ এবং স্থপতিরা বলেছেন, ‘‘রেস্তোরাঁ উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে এবং লাখো মানুষ এই খাতে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। তাই রেস্তোরাঁগুলোকে নিয়মিত করা প্রয়োজন। তবে বিচ্ছিন্ন অভিযানে সমস্যার সমাধান হবে না।

এভাবে দেশের রেস্তোরাঁ খাতে নানা জটিলতা এবং নিয়মের অভাবের সমাধান কার্যকরীভাবে করতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন এবং নিরাপদে মানুষের সেবা দিতে পারেন।