ঢাকা মোটর শোতে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের দাপট

প্রতিবেদক: রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত ‘১৮তম ঢাকা মোটর শো ২০২৫’ শেষ হয়েছে শনিবার। গাড়ি, মোটরসাইকেল, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং বিভিন্ন মোটরের যন্ত্রাংশ নিয়ে আয়োজিত এই শোতে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল ঘিরে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেমস গ্লোবাল জানায়, এবার দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক যানবাহনের যে প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, এই প্রদর্শনী ছিল তারই প্রতিফলন।

চারটি হলজুড়ে ছিল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি ও মোটরসাইকেল। তবে ২ নম্বর হলে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের স্টলগুলোতেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্টলগুলোতে নতুন প্রযুক্তির ই-বাইকের পাশাপাশি ছিল আকর্ষণীয় অফার ও ইনোভেটিভ উপস্থাপনা, যা তরুণ দর্শনার্থীদের বেশ আকৃষ্ট করেছে।

চীনা প্রতিষ্ঠান সালিদা ইলেকট্রিক ভেহিকেল বাংলাদেশে প্রায় দুই বছর ধরে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে। প্রতিষ্ঠানটি এবার প্রদর্শনীতে ৬০০ থেকে ৩ হাজার ওয়াটের মোট ১২টি মডেল প্রদর্শন করেছে। এসব ই-বাইক একবার চার্জে ৮০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। দাম রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মধ্যে। বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে, এসব বাইক চাবি ছাড়াও চালানো যায় এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) কার্ডের মাধ্যমে।

অন্যদিকে, ডংজিন নামের আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান দেশে প্রায় আট বছর ধরে ব্যাটারি বিক্রির পর এবার সাতটি নতুন বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বাজারে এনেছে। এসব বাইক ১২০০ থেকে ১৫০০ ওয়াটের, এবং দেশেই সংযোজন করা হয়। দাম রাখা হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় নির্বাহী জাহিদ হাসান বলেন, “বৈদ্যুতিক বাইকের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মেলায় আমরা দারুণ সাড়া পেয়েছি।”

প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডও। উত্তরা মোটরস এবারের শোতে উদ্বোধন করেছে বাজাজ পালসার এফ২৫০ ডুয়েল চ্যানেল এবিএস মডেল, যার মূল্য ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এছাড়া স্পিডোজ লিমিটেড জিপিএক্স এবং কিউজ ব্র্যান্ডের এবিএস ও নন-এবিএস মডেলের বাইক প্রদর্শন করে, যেগুলোর দাম ২ লাখ ২৪ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে।

শুধু মোটরসাইকেল নয়, যন্ত্রাংশ নির্মাতা ব্র্যান্ড আরসিবির স্টলেও ছিল ব্যাপক ভিড়। তরুণ বাইকারদের মধ্যে এ ব্র্যান্ডের পারফরম্যান্স পার্টস ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রদর্শনীতে যাত্রাবাড়ী থেকে আসা দর্শনার্থী জামাল উদ্দিন বলেন, “এবারের মেলায় অনেক নতুন মডেলের বাইক এসেছে, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক বাইকের ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ। দামও তুলনামূলকভাবে নাগালের মধ্যে।”

সেমস গ্লোবালের এই আয়োজনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, জ্বালানি খরচ সাশ্রয় এবং আধুনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। শোতে এ ধরনের গাড়ি ও বাইকের প্রদর্শনী দেশের বৈদ্যুতিক যানবাহন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।