
প্রতিবেদক: দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশি–বিদেশি ৩৩টি ব্যাংক ২০২২ সালে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অবকাঠামো উন্নয়নে ২ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। তবে ২০২৪ সালে এই খাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকায়। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের আইটি বিনিয়োগ কমেছে ১৩৩ কোটি টাকা।
বুধবার সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের চারজন শিক্ষক ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণায় বলা হয়, দেশের অনেক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে, যার পেছনে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ঋণখেলাপি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। বড় অঙ্কের ঋণ অনিয়ম ও অর্থ লুটপাটের কারণে ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিপত্রে চাপ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দীর্ঘমেয়াদি খাতে বিনিয়োগের ওপর, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। একই সঙ্গে সুশাসন ও যথাযথ তদারকির অভাব ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরের পথকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়, ব্যাংকগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি বাজেটের একটি বড় অংশই ব্যয় হয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কিনতে। ২০২৪ সালে ব্যাংকগুলো আইটি খাতে যে অর্থ ব্যয় করেছে, তার ৪১ শতাংশ গেছে হার্ডওয়্যারে এবং ২৯.৩ শতাংশ সফটওয়্যারে। কিন্তু আইটি নিরাপত্তা, নিরীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় হয়েছে মোট খরচের ৯ শতাংশেরও কম।
তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। ২০১৫ সালে মাত্র ৫২ শতাংশ ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু করেছিল। বর্তমানে দেশের প্রায় সব ব্যাংকই লেনদেনভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে। ২০২০ সালে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ ৪৫ হাজার এবং লেনদেন ছিল ২ কোটি ৪৪ লাখ। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ গ্রাহক ও ১৫ কোটির বেশি লেনদেন।
কর্মশালায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের শিক্ষক শিহাব উদ্দিন ও ফয়সাল হাসান। শিহাব উদ্দিন বলেন, নতুন প্রজন্মের গ্রাহকেরা আধুনিক লেনদেন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত। তাই ব্যাংকগুলোর উচিত দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি পরিচালনব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং অটোমেশনের মাধ্যমে আরও নির্ভুল সেবা নিশ্চিত করা।
ফয়সাল হাসান বলেন, ব্যাংকগুলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মূলত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে বিনিয়োগ করলেও নিরাপত্তা, নিরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বরাদ্দ কম। তাই এই খাতগুলোতে বাজেট বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন।
কর্মশালার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ জরুরি। এটি ব্যয়বহুল হলেও অবহেলা করা উচিত নয়। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার অধ্যাপক ফারুক এম আহমেদ, মহাপরিচালক আবদুল হাকিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় এবং পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী।
গবেষণাপত্রে ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আইটি খাতে খাতভিত্তিক বরাদ্দ বাড়ানো, নিরীক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনবল বৃদ্ধি, গ্রামাঞ্চলে ক্যাশ রিসাইকেল মেশিন স্থাপন এবং তথ্য ব্যবস্থাপনায় সাইবার সুরক্ষা জোরদার করা।