তলানিতে দেশের শেয়ারবাজার, টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলো

প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরে চরম তারল্য সংকটে রয়েছে। দৈনিক লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত নিম্নপর্যায়ের। শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মতে, দৈনিক লেনদেন ১,০০০ কোটি টাকা না হলে তারা লোকসান এড়াতে পারে না। ফলে গত এক দশকে ৯০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস লোকসানে চলছে এবং টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

লেনদেন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলো পর্যাপ্ত ব্রোকারেজ কমিশন পাচ্ছে না। ফলে কেউ কেউ বিনিয়োগকারীদের নগদ অর্থ বা শেয়ার বিক্রি করে নিজেদের খরচ মেটাচ্ছে। এমনকি টিকে থাকার জন্য কিছু ব্রোকারেজ হাউস শেয়ার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বিবেচনায় বাজার মূলধন ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ওই দিন বাজারে লেনদেন হয় ৪৯৭ কোটি টাকা, যা ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের মাত্র ০.৩৬ শতাংশ।

দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সিইও সাফফাত রেজা জানান, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কোনো বাজারে ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের অন্তত ১-২ শতাংশ লেনদেন হলে তা তারল্য সুবিধার দিক থেকে ভালো ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।

ডিএসই ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ৯০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস লোকসানে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। অন্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে বেশির ভাগ ব্রোকার তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। ভর্তুকির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এবং বিএলআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জানান, ক্রমাগত লোকসানের কারণে একটি নতুন ব্রোকারেজ হাউস সম্প্রতি লাইসেন্স ‘সারেন্ডার’ করার আবেদন করেছে।

ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে বেশ কয়েকটি মন্দ কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বা লোকসানে চলছে। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না, ফলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বেশি, সরকারও বেশি কর পায়। তবুও এ খাতে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারের মনোযোগ নেই।”

ডিবিএ সভাপতি মনে করেন, বাজারের উন্নয়নের জন্য ভালো কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্ত করা জরুরি।

তিনি বলেন, সরকারি লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করলে বাজার চাঙা হতে পারে। বিদেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির নীতি গ্রহণ করলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, এতে শুধু ব্রোকারেজ হাউসগুলো টিকবে না, পুরো দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি ইতিবাচক হবে।