তিন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অনলাইন ডেক্স: বেসরকারি খাতের আরও তিনটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদিত চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজ (বুধবার) ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। উল্লেখযোগ্য যে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান ও পরিচালক আত্মগোপনে চলে গেছেন। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালকে সরিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়ার নেতৃত্বে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

পর্ষদে আরও রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর ও আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. নুরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. শফিকুর রহমান, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ।

মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এএইচ এন আশিকুর রহমানকে সরিয়ে প্রাণ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে উজমা চৌধুরী ও ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশনের প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ রয়েছেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক হাবিবুর রহমান ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আলী আকতার রিজভী এফসিএ।

এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানকে অপসারণ করে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিইকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পর্ষদে রয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মিজানুর রহমান এফসিএ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুনভাবে গঠন করা হয়েছে।

কিছুদিন আগেই ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভাঙার আলোচনা চলছিল, তবে আমানতকারীদের আতঙ্ক কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িক বিরতি দেয়। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় একদিনে তিনটি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক  এস আলমের ভাই আব্দুস সামাদ লাবুর নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করা হয়।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ পরিবারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা হয়।
এক্সিম ব্যাংক বিএবির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়।

বিশেষ করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে বারবার আলোচনায় ছিলেন।

  • তিনি জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি।
  • গত ৪ আগস্ট সংঘটিত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মো. বেলাল হোসেন রাব্বির (২৬) মা জেসমিন আক্তার শাহবাগ থানায় মামলা করেন, যেখানে আসামি করা হয় পারভেজ তমালসহ ২২ জনকে।
  • মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও আসামি করা হয়।
  • নভেম্বরে পারভেজ তমালসহ ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম ও সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক পদক্ষেপে রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত ও অনিয়মে জড়িত ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুশাসন নিশ্চিত করতে আরও ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।