
প্রতিবেদক: তুলা আমদানির ওপর সম্প্রতি ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের বস্ত্রকল মালিকেরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, এই সিদ্ধান্ত পার্শ্ববর্তী দেশের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে কি না।
শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এই উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আগামী সোমবারের মধ্যে এআইটি প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “আমার নিজের কারখানায় তুলা থেকে সুতা উৎপাদনের চেয়ে ভারত থেকে তৈরি সুতা আমদানি করলেই খরচ কম পড়ে। তাহলে কি আমরা এই নীতিমালা করে পার্শ্ববর্তী দেশের কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছি? সরকার কি ওদের স্বার্থরক্ষায় বেশি আগ্রহী?” তিনি সরকারের এই নীতির পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
সংগঠনটি শুধু ২% এআইটির প্রত্যাহার নয়, বরং দেশে উৎপাদিত তুলার সুতা ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট কর অব্যাহতির সুপারিশও করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিটিএমএর পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, অমল পোদ্দার, হোসেন মেহমুদ, মো. খোরশেদ আলম, রাজিব হায়দার ও সালেহউজ্জামান খান।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল আরও বলেন, “একদিকে ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ, অন্যদিকে আমাদের মূলধন থেকে আয়কর হিসেবে ১–২ শতাংশ করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেওয়া হলে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বস্ত্রকল মালিকেরা এখন এমন অবস্থায় পড়েছেন যে, অনেকে তাঁদের কারখানা বিক্রি করে দিতে চান। নতুন করে এই এআইটি আরোপ হওয়ায় সেটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিটিএমএর আরেক পরিচালক মো. খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের ষড়যন্ত্র কয়েক বছর ধরেই চলছে, এবং এই সিদ্ধান্ত সেই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে।
পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে অনেক ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির দিকে ঝুঁকছিলেন। কিন্তু এই ২% এআইটি আরোপের ফলে ওই পথটিও অবরুদ্ধ হয়ে গেল।
বিটিএমএর তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির অধীনে ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিল রয়েছে, যেখানে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্প—যা দেশের প্রধান রপ্তানি খাত—এর সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশই আসে এই বস্ত্র খাত থেকে। ফলে বস্ত্রশিল্পের ওপর যে সংকটের প্রভাব পড়ে, তা সরাসরি পোশাকশিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।