
প্রতিবেদক: সাধারণ মানুষ যে এখন কঠিন সময় পার করছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দারিদ্র্য বাড়ছে কি না—তা যদিও পরিসংখ্যানের বিষয়, তবে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাই বলে দেয় মানুষের জীবনে কষ্ট বাড়ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। হোসেন জিল্লুর রহমানের প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
মানুষ অনেক সময় কষ্টকে মানিয়ে নিতে পারে। কম পণ্য কেনে, কম খায়, যাকে বলা হয় ‘নেতিবাচক মানিয়ে নেওয়া’। কিন্তু এখন যে সংকট দেখা যাচ্ছে, তা সাময়িক নয়; বরং দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠছে। এতে মানুষের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো কতটা কার্যকর এবং খাতভিত্তিক বরাদ্দ কতটা সঠিক, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯-এর অভিঘাতে বহু মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। সেই সময়ের গবেষণাও সে বিষয়টি তুলে ধরেছে।
বিগত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগ স্থবির, কর্মসংস্থান থমকে, তরুণেরা কাজ পাচ্ছেন না—এমন বাস্তবতা চলছিল। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি সম্প্রতি ৮ হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ শেষ করেছে। জুন মাসের মধ্যে তার ফল প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে।
দারিদ্র্য একটি আপেক্ষিক বিষয়। কিছু সময় বাড়ে, আবার কখনো কমে। তবে আশঙ্কার বিষয় তখনই হয়, যখন দারিদ্র্য কাঠামোগত সমস্যায় পরিণত হয়। বর্তমান পরিস্থিতি সেই পথে যাচ্ছে কি না, তা বুঝতে উন্নতমানের ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান জরুরি।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সাময়িকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বিস্তৃত, কার্যকর ও প্রায়োগিক করতে হবে। একইসঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে হবে—প্রয়োজনে তাদের সহায়তা দিতে হবে।
অবশ্যই আমাদের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে হবে। তৈরি পোশাক ও প্রবাসী আয়ের বাইরে নতুন প্রবৃদ্ধির খাত খুঁজে বের করতে হবে। কৃষি ও এর উপখাত, তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেবা, চামড়া, ওষুধশিল্প ইত্যাদি খাতগুলোতে সম্ভাবনা খোঁজার এখনই সময়। এসব বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাও জরুরি। ইতিমধ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা দূর করা ছাড়া কোনো পথ নেই।