
প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটির পর রোববার (১৬ জুন) দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি বাজার। দিনের শুরুতেই দেখা দেয় দরপতন। যদিও দিন শেষে সূচক ও লেনদেনে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবু তা বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটাতে যথেষ্ট নয়। বরং কিছু ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, কমেছে ১৭৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টির দর। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৪,৭২৪ পয়েন্টে। মোট লেনদেন হয় ২৬৩ কোটি টাকার, যা আগের দিনের তুলনায় ৩৯ কোটি টাকা বেশি।
তবে বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এ লেনদেন বর্তমান পরিস্থিতিতে আশান্বিত হওয়ার মতো নয়। এ পরিমাণ লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পরিচালন ব্যয় ওঠানোও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পরিচালন ব্যয় মেটাতেও সমস্যা হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজেট ঘিরে কিছু প্রত্যাশা তৈরি হলেও ঘোষিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি কোনো সুখবর না থাকায় হতাশা বেড়েছে। এর ফলে নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বরং অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার আরও দীর্ঘমেয়াদি মন্দার মুখে পড়তে পারে।
ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সূচকের নেতিবাচক প্রবণতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, রেনাটা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দরপতন। এসব কোম্পানির প্রভাবে সূচক ৭ পয়েন্ট কমেছে।
অন্যদিকে সূচকের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে অবদান রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, এসিআই, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও বীকন ফার্মা। এদের দরবৃদ্ধিতে সূচক ১৮ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য খাতে, যার পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি টাকা। এর অর্ধেকের বেশি ছিল লাভেলো আইসক্রিম কোম্পানির, যার একদিনেই ২৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এর ফলে কোম্পানিটি দিনের সর্বোচ্চ লেনদেনকারী হিসেবে উঠে আসে এবং খাদ্য খাতকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ব্যাংক খাতে, যার পরিমাণ ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এককভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের লেনদেন ছিল ১৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেক।
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে বাজারে নতুন করে আশাবাদ তৈরির কিছু নেই। বাজেট ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ বাজার থেকে সরে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি না বদলালে বাজার আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।