দুই বছর ধরে বন্ধ উসমানিয়া গ্লাস, লোকসান-ঋণে জর্জরিত সরকারি কারখানা

প্রতিবেদক: দেশের একমাত্র শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কাচ কারখানা উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউজিএসএফএল) দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত এ কারখানাটি সর্বশেষ বন্ধ হয় ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট, যখন দ্বিতীয় ফার্নেসের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যায়। এর আগে ২০২০ সালে অগ্নিকাণ্ড এবং জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতির কারণে কারখানাটি একাধিকবার বন্ধ হয়েছিল।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক যুগে প্রতিষ্ঠানটি কোনো লাভ করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা মুনাফা করে। এরপর থেকে প্রতিবছরই লোকসান গুনছে উসমানিয়া। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান দাঁড়ায় ১২ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, অথচ ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ, প্রতি ১ টাকা আয় করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা।

২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির কাচ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১০৪ কোটি টাকা, কিন্তু বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬৯ কোটি টাকার। অর্থাৎ, প্রতি ১ টাকা আয় করতে গড়ে দেড় টাকা খরচ হয়েছে। এর মূল কারণ হলো পুরোনো প্রযুক্তি, জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পণ্যের অভাব।

উসমানিয়া গ্লাস ১৯৫৯ সালে উৎপাদন শুরু করে এবং ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ হয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এটি ছিল দেশের একমাত্র কাচ কারখানা। তবে পরবর্তীতে এমইবি, পিএইচপি, নাসির ও আকিজসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানসম্মত কাচ উৎপাদন শুরু করলে উসমানিয়ার বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে সরকারি দামে কাচ বিক্রি করেও বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

দুই বছর ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এখন আয় হচ্ছে কেবল পুরোনো কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে। বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় ৪৫ শতাংশ বেতন-ভাতায় ব্যয় হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১০৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন এবং তাঁদের বেতন চলে বিসিআইসি থেকে নেওয়া ঋণের ওপর ভর করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ কোটি টাকা, আর মোট দায়-দেনা প্রায় ৬১ কোটি টাকার বেশি। এদিকে ২০১৯–২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৭টি বোর্ড সভায় শুধু সম্মানী বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আনিসুজ্জামান জানিয়েছেন, কারখানা চালুর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিদ্যমান প্রযুক্তি দিয়ে উৎপাদনে ফিরলেও তা লাভজনক হবে কি না, তা অনিশ্চিত। অন্যদিকে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, পুরোনো প্রযুক্তি দিয়ে বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়। দায়-দেনা মিটিয়ে জায়গাটিতে বেসরকারি সহযোগিতায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা নতুন কোনো শিল্প গড়ে তোলাই হবে কার্যকর সমাধান।