দুর্নীতি আর দখলদারিত্বের পর নতুন নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইউসিবি

প্রতিবেদক: বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। লুটপাটের শিকার হওয়া বেশ কয়েকটি ব্যাংক পুরোনো মালিকদের হাতে ফিরে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুমায়ুন জহির পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ফেরায় ব্যাংকটির অস্তিত্ব রক্ষা পায়। বর্তমানে হুমায়ুন জহিরের ছেলে শরীফ জহীরের নেতৃত্বে অল্প সময়েই ইউসিবি তার হারানো সুনাম পুনরুদ্ধার করেছে।

ইউসিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষ, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বে ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরে এসেছে। কর্মকর্তাদের মতে, চেয়ারম্যান শরীফ জহীরের সুব্যবস্থাপনায় আমানতকারীদের আস্থা ফিরেছে এবং প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড সংকটও কেটে গেছে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “যেখানে অব্যবস্থাপনা থাকে, সঠিক নেতৃত্বে দ্রুত ভালো ফল আসে। তবে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সময় লাগবে।”

ইউসিবির দীর্ঘ ইতিহাসে বহু কলঙ্কের জন্ম হয়েছে। এর জন্য দায়ী চট্টগ্রামের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও তার পরিবার। তাদের অপেশাদারি ও অনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে ইউসিবি বারবার আর্থিক সংকটে পড়ে এবং সুনাম হারায়। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুমায়ুন জহিরের হত্যাকাণ্ড, যেখানে বাবুর নাম সামনে আসে। এ ঘটনায় তার পরিবার দীর্ঘ দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়।

হুমায়ুন জহিরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কামরুন নাহার দৃঢ় হাতে ব্যবসা ও পরিবার সামলান। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। অনন্ত গ্রুপকে এগিয়ে নেন আন্তর্জাতিক মানে। বড় ছেলে শরীফ জহীর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে মায়ের সঙ্গে ব্যবসার হাল ধরেন। বর্তমানে অনন্ত গ্রুপে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

১৯৯০-এর দশকে আওয়ামী লীগের অন্যতম বড় অর্থদাতা ছিলেন আখতারুজ্জামান বাবু। শেখ হাসিনার পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনি পাশে থাকতেন। ১৯৯৯ সালে সশস্ত্র অবস্থায় ইউসিবির নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে তার ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ভূমিমন্ত্রী থাকার সময় ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। অভিযোগ ওঠে, জাভেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান ও ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ইউসিবিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেন এবং অবৈধ আয় কেন্দ্র বানান।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে যান জাভেদ। এরপর আলজাজিরাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লন্ডনসহ বিদেশে তার পাচার করা সম্পদের তথ্য প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তার সম্পদ জব্দ ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়।

বর্তমানে ইউসিবির নেতৃত্বে আছেন শরীফ জহীর। তিনি বলেন, “অতীতে অনেক কিছু ঘটেছে। আমরা এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ব্যাংকটিকে দ্রুত সময়ে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে আমরা সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাচ্ছি।”