দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নতুন অধ্যাদেশ জারি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেল বিস্তৃত ক্ষমতা

প্রতিবেদক: দুর্বল ও অকার্যকর ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দুর্বল ব্যাংকসমূহকে সাময়িক সময়ের জন্য সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে এবং প্রয়োজনে শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। এমনকি একীভূতকরণ, ব্রিজ ব্যাংক গঠন, নতুন শেয়ার ইস্যু এবং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ারও ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে।

অধ্যাদেশ অনুসারে, ইসলামী ব্যাংকসহ সবধরনের ব্যাংকের ক্ষেত্রেই এই বিধান প্রযোজ্য হবে। ব্যাংকের ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদনের পর ৯ মে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে এই নতুন আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি আলাদা বিভাগ গঠন করতে হবে, যেখানে ব্যাংকগুলোর পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার হালনাগাদ তথ্য জমা হবে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রণীত পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে ২০২৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে চারটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হবে। ক্যাটেগরি-৪ এর ব্যাংকগুলো দ্রুত অধ্যাদেশের আওতায় নিষ্পত্তি করা হবে।

এই অধ্যাদেশের লক্ষ্য হলো জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং ব্যাহত ব্যাংকিং কার্যক্রম সচল রাখা। যদি কোনো ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তখন তা নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নিতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে কোনো ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে, বিদ্যমান শেয়ারধারীদের পরিবর্তন করে মূলধন পুনর্গঠন করতে পারবে, এমনকি ব্রিজ ব্যাংক গঠন করে তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং হস্তান্তরের সময়সীমা সর্বোচ্চ দুই বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক দুই কর্মদিবসের জন্য দুর্বল ব্যাংকের সব কার্যক্রম স্থগিত বা সীমিত করতে পারবে। পরে তিন মাস পর্যন্ত আংশিকভাবে কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের আগে সম্ভাব্য আর্থিক প্রভাব বিবেচনায় নিতে হবে এবং আমানতকারীদের জন্য দৈনিক উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ছয়টি দুর্বল ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিযুক্ত করেছে। এসআইবিএল, গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং, আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছে কেপিএমজি। এর আগেই এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং অনেক এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক রেজল্যুশন তহবিল’ গঠন করবে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব দায়-সম্পদের অংশ হবে না। এই তহবিলে অর্থ আসবে সরকার ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ বা অনুদান, পাশাপাশি বিনিয়োগ আয় ও ব্যাংকগুলোর চাঁদা থেকেও। এই তহবিল ব্রিজ ব্যাংক গঠনসহ দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ব্যয় মেটাতে ব্যবহার করা হবে।

এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “কোনো আইন খারাপ নয়, তবে প্রয়োগের দিকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইন যেন সুশাসনের সঙ্গে মানানসইভাবে প্রয়োগ হয়, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।”