দেশীয় বাজারে রিফ ব্র্যান্ডের চামড়ার জুতা নিয়ে আসছে টি কে গ্রুপ

অনলাইন ডেক্স: দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাপানে চামড়ার জুতা রপ্তানি করছে চট্টগ্রামের টি কে ফুটওয়্যার। বর্তমানে তারা জাপানি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাসে ১৫-২০ হাজার জোড়া চামড়ার জুতা রপ্তানি করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও প্রবেশ করতে যাচ্ছে টি কে গ্রুপ। এ লক্ষ্যে রিফ ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস নামে একটি নতুন কোম্পানি গঠন করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যার অধীনে রিফ ব্র্যান্ডের চামড়ার জুতা বিক্রি করা হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়ায় রিফ ফুটওয়্যারের প্রথম বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে। ৯৫০ বর্গফুটের এই বিক্রয়কেন্দ্রে নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য চামড়ার জুতা পাওয়া যাবে।

এর আগে, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ও কালুরঘাটে দুটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করে রিফ ফুটওয়্যার। সেখান থেকে ভালো সাড়া পাওয়ায় এবার নতুন করে তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকার বিক্রয়কেন্দ্র আজ চালু হচ্ছে এবং এরপর চট্টগ্রামের শপিং কমপ্লেক্স ও নাসিরাবাদে আরও দুটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করা হবে।

রিফ লেদারের অভিজ্ঞতা

রিফ লেদার বাংলাদেশের চামড়াশিল্পে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি ট্যানারি স্থাপন করে, যা বর্তমানে বিদেশে চামড়া রপ্তানি করে। ২০১৯ সালে রিফ লেদার বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (LWG) সনদ লাভ করে। এটি বাংলাদেশের সাতটি এলডব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত কারখানার মধ্যে একটি।

বর্তমানে রিফ লেদার প্রতি মাসে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ বর্গফুট চামড়া রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানটির ৯-১০টি নিয়মিত ক্রেতা রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ইউরোপের। ২০২৩ সালে তারা ১০০ কোটি টাকার চামড়া রপ্তানি করেছে।

দেশীয় জুতার বাজারের সম্ভাবনা

দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রুচি ও মান সচেতনতা বাড়ার কারণে ব্র্যান্ডেড জুতার চাহিদা প্রতি বছর ১২-১৫% হারে বাড়ছে। ফলে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনিয়োগ করছে, যার সর্বশেষ সংযোজন রিফ ফুটওয়্যার।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী—দেশে বার্ষিক জুতার চাহিদা ২০-২৫ কোটি জোড়া।এর ৪০% জুতা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।দেশে ৬,২০০টির বেশি জুতা ও চামড়াপণ্যের কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে আড়াই হাজার কারখানা শুধু জুতা তৈরি করে।

বাজারের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী—৩০% বাজার ব্র্যান্ডের জুতার দখলে, বাকি ৭০% নন-ব্র্যান্ড, আঞ্চলিক ব্র্যান্ড ও আমদানি করা জুতা।জুতার ব্যবসা আগে উৎসবকেন্দ্রিক হলেও এখন সারা বছরই কম-বেশি বিক্রি হয়।

তবে ২৫-৩০% বিক্রি হয় ঈদুল ফিতরে।বর্তমানে বাটা, অ্যাপেক্স ও লোটো ব্র্যান্ডের জুতার বাজারে শীর্ষে রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র চামড়ার জুতা নিয়ে বাজারে আসছে রিফ ফুটওয়্যার। এখানে উচ্চ, মধ্যম ও সাশ্রয়ী দামের জুতা থাকবে। অধিকাংশ জুতা উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব রিফ লেদারের চামড়া ব্যবহার করা হবে। আপাতত চট্টগ্রামের কালুরঘাটে টি কে ফুটওয়্যারের একটি ইউনিটে স্থানীয় বাজারের জন্য জুতা তৈরি করা হচ্ছে।

রিফ লেদারের পরিচালক মো. মখলেসুর রহমান বলেন,বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের জুতার চাহিদার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানি করা হয়। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই এবং ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জুতা সরবরাহ করতে চাই।”

টি কে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার বলেন,আমরা পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় বাজারে জুতার ব্যবসা শুরু করেছি। ভালো সাড়া পেলে আরও বড় পরিসরে এই ব্যবসা সম্প্রসারণ করবো।

টি কে গ্রুপের যাত্রা শুরু ১৯৭২ সালে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও মোহাম্মদ আবুল কালাম নামের দুই ভাই সয়াবিন তেল পরিশোধন কারখানা (TK Oil Refinery) গড়ে তোলেন। তাদের নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে তৈরি হয় “TK (তৈয়ব-কালাম) গ্রুপ”।

বর্তমানে ভোজ্যতেল, ভোগ্যপণ্য, ঢেউটিন, পার্টিকেল বোর্ড, ট্যানারি, পেপারসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করছে টি কে গ্রুপ। এবার তারা চামড়ার জুতার বাজারে রিফ ব্র্যান্ড নিয়ে প্রবেশ করলো।

জাপানে চামড়ার জুতা রপ্তানির সফল অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার দেশীয় বাজারে রিফ ব্র্যান্ডের চামড়ার জুতা নিয়ে আসছে টি কে গ্রুপ। গুণগত মান বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য সরবরাহ করতে পারলে তারা দেশীয় ব্র্যান্ডের বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এখন দেখার বিষয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা কতটা ইতিবাচক সাড়া পায়।