
প্রতিবেদক: দেশেই তৈরি হচ্ছে জাপানের মিতসুবিশি ও মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের গাড়ি। এসব গাড়ি তৈরি হচ্ছে গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর গ্রামে অবস্থিত র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায়। এত দিন এই কারখানায় বিদেশ থেকে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হতো মাত্র। তবে এখন এখানে গাড়ির মূল কাঠামো ও অন্যান্য অংশ রং করার পাশাপাশি সেগুলো সংযোজন ও বাজারজাতের আগে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষাও সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন কার্যক্রম চালুর জন্য কারখানাটিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং এতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।
র্যানকন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে গাড়ি উৎপাদনের ফলে দেশে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং একই সঙ্গে সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন গাড়ি বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের একটি দল সরেজমিনে র্যানকন শিল্পপার্ক এবং র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা পরিদর্শন করেন। প্রায় ৫৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই শিল্পপার্কে তিনটি পৃথক উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা রয়েছে—র্যানকন মোটরবাইক, র্যানকন ইলেকট্রনিকস ও র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। এখানে সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল, তোশিবা, এলজি ও স্যামসাংয়ের টেলিভিশন ও ফ্রিজ এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ি তৈরি ও সংযোজন করা হয়। বর্তমানে এই শিল্পপার্কে আট শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শিহাব আহমেদ জানান, ২০১৭ সালে মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার মডেলের গাড়ি সংযোজনের মাধ্যমে র্যানকন অটোর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৯৮ হাজার বর্গফুটের কারখানায় চার ধরনের গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার মডেল, প্রোটনের এক্স–৭০, চীনের জ্যাক পিকআপ ট্রাক এবং জার্মান প্রযুক্তিতে মার্সিডিজ–বেঞ্জ বাস। এসব গাড়ির মূল কাঠামো আমদানি করা হলেও রং, সংযোজন এবং মান যাচাইয়ের সব কাজ কারখানাতেই হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশে একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের টেস্টট্র্যাকটি রয়েছে এ কারখানায়, যেখানে গাড়ির গতি, ব্রেক, হ্যান্ডলিং, সাসপেনশনসহ বিভিন্ন কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
র্যানকনের নির্বাহী পরিচালক মো. বদিউজ্জামান জানান, বর্তমানে তাদের কারখানায় বছরে ২,০০০ ইউনিট মিতসুবিশি এক্সপেন্ডার, ৩০০–৪০০ ইউনিট প্রোটন এক্স–৭০, ৬০০ ইউনিট জ্যাক ট্রাক এবং ৩৬০ ইউনিট মার্সিডিজ বাস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার ও প্রোটন এক্স–৭০ মডেলের গাড়ির পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে এবং আগামী জুনে এই দুটি মডেলের গাড়ির বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু হবে। এর মধ্যে প্রোটন এক্স–৭০ একটি পাঁচ আসনের এসইউভি এবং মিতসুবিশি এক্সপেন্ডার একটি সাত আসনের মাল্টিপারপাস ভেহিকেল, যা যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য উপযোগী। মিতসুবিশির এক্সপেন্ডার মডেলটি ১৫০০ সিসির এবং শহরের অভ্যন্তরে চলাচলে প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। প্রতিটি গাড়িতে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি থাকবে, যদিও এখনো দাম নির্ধারণ করা হয়নি।
র্যানকনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মিতসুবিশির এই মডেল বাংলাদেশে ভালো জনপ্রিয়তা পাবে। কারণ মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে এই গাড়িগুলো শীর্ষ বা দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে। র্যানকনের অটোমোটিভ বিভাগের বিপণনপ্রধান মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন বলেন, “জাপানি মানের গাড়ি তৈরির সক্ষমতা এখন আমাদের রয়েছে এবং আমাদের কারখানার বিশ্বমানের নির্মাণসুবিধা মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এমজি ব্র্যান্ডের গাড়িও এখানে সংযোজন করা হবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে কারখানাটিতে চার ধরনের ব্যক্তিগত ও দুই ধরনের বাণিজ্যিক গাড়ি সংযোজনের লক্ষ্য রয়েছে।