দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও বাড়ছে না কৃষিশ্রমিক, যান্ত্রিকীকরণে স্থবিরতা

প্রতিবেদক: বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়ছে না কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা। ফলে ফসল কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এই ঘাটতি পূরণে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে গুরুত্ব দিলেও, সাম্প্রতিক দুর্নীতির অভিযোগের কারণে সে উদ্যোগ অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে।

২০২০ সালে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়, যাতে সমতল এলাকায় ৫০ শতাংশ ও হাওরাঞ্চলে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছিল। এই ভর্তুকির আওতায় সারা দেশে ৫১ হাজার ৩০০টি যন্ত্র বিতরণের লক্ষ্য ছিল। তবে দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের জুন থেকে প্রকল্পে ভর্তুকি প্রদান স্থগিত করা হয়। এর ফলে কৃষিযন্ত্রের বিক্রি ৮০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এসিআই, মেটাল, আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ, আবেদিন, বাংলা মার্কসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করছে। এর মধ্যে এসিআই অ্যাগ্রি বিজনেসের প্রেসিডেন্ট এফ এইচ আনসারী জানান, ভর্তুকি বন্ধ হওয়ায় তাঁদের বিক্রি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে এবং বর্তমানে আগের আমদানিকৃত যন্ত্রগুলো ২০–৩০ শতাংশ অগ্রিম নিয়ে কিস্তিতে বিক্রি করা হচ্ছে।

মেটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল জানান, আগে যেখানে তারা বছরে ৫০০–৭০০টি কম্বাইন হারভেস্টার বিক্রি করতেন, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ১০০–১৫০টিতে। কারণ, ভর্তুকি ছাড়া ৩২ লাখ টাকা দিয়ে এসব যন্ত্র কেনা বেশিরভাগ কৃষকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই তারা এখন ৫–৭ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে বাকিতে বিক্রি করছেন যন্ত্রপাতি।

এদিকে খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে কৃষিযন্ত্রের বাজারের আকার এখন চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো। প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ হাজার ট্রাক্টর আমদানি হচ্ছে। পূর্বে ট্রাক্টরে ভর্তুকি থাকায় এ বাজার প্রসারিত হয়েছিল। তারা মনে করেন, আগামী পাঁচ বছর যদি হারভেস্টারসহ অন্যান্য যন্ত্রে নিয়মিত ভর্তুকি চালু থাকে, তাহলে যান্ত্রিকীকরণের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কৃষি এখন বাণিজ্যিক দিকে যাচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ভর্তুকি চালু রাখতে হবে।”

তবে এই প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগও সামনে এসেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দুদক জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যন্ত্র বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এখন তা এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ৪০ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, বাকি ১১ হাজারের বেশি যন্ত্রও বিতরণ করা হবে। আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, অনিয়মের তদন্ত চলছে। সবকিছু ঠিক হলে আবারও ভর্তুকি চালু হবে। তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে।